ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনার মধ্য দিয়ে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে আজ রোববার।
বেলা একটা থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। প্রায় ১৭ মিনিট ধরে চলে মোনাজাত। মাওলানা জোবায়েরুল হাসান মোনাজাত পরিচালনা করেন।
মাঠ, রাজপথ, ঘরবাড়ির ছাদ, তুরাগের দুই তীর, কিনারে ভিড়ে থাকা নৌকা, পথে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে কাতরস্বরে মহান আল্লাহর কাছে মিনতি করে প্রার্থনা করেছেন ধর্মপ্রাণ অগণিত মানুষ। এ সময় কারও দুই চোখ ছিল মুদিত, কারও দৃষ্টি ছিল সুদূরে প্রসারিত। আর থরথর কম্পমান দুই ঠোঁটে মৃদু স্বরে উচ্চারিত হয়েছে ‘আমিন আমিন’ ধ্বনি।
জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে পানাহভিক্ষা করছিলেন তাঁরা। ক্ষমালাভের আশায় লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা।
গত শুক্রবার ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। চার দিন বিরতির পর ১৮ জানুয়ারি শুরু হবে এর দ্বিতীয় পর্ব।
পাঁচ মুসল্লির মৃত্যু
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গতকাল শনিবার রাতে ভারতীয় নাগরিকসহ পাঁচ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: ভারতের কলকাতার ২৪ পরগনার মো. রফিক উদ্দিন (৬৩), ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার মৈন্দা গ্রামের আলাউদ্দিন শেখ (৫০), যশোরের মনিরামপুর থানার তেঁতুলিয়া এলাকার সৈয়দ আলী খান (৭০), হবিগঞ্জের লাখাইল থানার সিংহ গ্রামের মো. ইব্রাহীম (৫০) ও চাঁদপুরের উত্তর দাজদি এলাকার আবুল খায়ের (৫৫)। আজ রোববার ভোরে ফজরের নামাজের পর তাঁদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে গত তিন দিনে নয়জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
তাবলিগ জামাতের দীনের দাওয়াতের কর্মধারায় বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। ঢাকার রমনা উদ্যানসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে প্রথম ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছিল। মুসল্লির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৪৮ সালে ইজতেমা হয় বর্তমানে যেখানে হাজিক্যাম্প, সেই ময়দানে। ১৯৫৮ সালে ইজতেমা হয় সিদ্ধিরগঞ্জে। ক্রমবর্ধমান মুসল্লির সংখ্যায় স্থানসংকুলানের জন্য ১৯৬৬ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদের পারের মাঠে ইজতেমা শুরু হয়। সারা বিশ্ব থেকে ইজতেমায় মুসল্লিদের আগমন ঘটতে থাকে। দেশের সব অঞ্চল থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ আল্লাহর রহমত লাভে ধন্য হওয়ার আশায় ছুটে আসেন ইজতেমায়। টঙ্গীর বিশাল ময়দানও নেহাত ছোট হয়ে পড়ে এই বিপুলসংখ্যক মানুষের স্থানসংকুলানের জন্য। এ পরিস্থিতিতে গত বছর ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমার আয়োজন করেন তাবলিগের নেতারা।