বিগত ৫ বছরে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী কন্যাশিশু বিদেশের পতিতালয়ে পাচার হয়েছে এবং তাদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে সেভ দ্য চিল্ড্রেন। ভাল কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে জানালেন সেভ দ্য চিল্ড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইকেল ম্যাকগ্রাথ। তিনি বলেন, এদের মধ্যে ৩ লাখ শিশু ভারতে ও ২ লাখ শিশু পাকিস্তান পতিতালয়ে পাচার হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ (এনএইচআরসি) আয়োজিত ‘ইউনিভার্সাল পিয়্যারইঅডিক রিভিউ : ফলোআপ অন দ্য রিকমেন্ডেশনস অন চাইল্ড লেবার এ্যান্ড ট্র্যাফিকিং’ শীর্ষক কর্মশালায় মাইকেল ম্যাকগ্রাথ এ কথা বলেন। বুধবার গুলশানের ব্র্যাক ইন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় স্বাগত বক্তৃতা করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কাজী রেজাউল হক।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব রোখসানা হোসেন ও কমিশনের সদস্য এডভোকেট ফৌজিয়া করিম ফিরোজ।
আরো বক্তৃতা করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী পরিচালক গীতা চক্রবর্তী, উদ্দীপনের নির্বাহী পরিচালক এমরানুল হক চৌধুরী ও রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন গুহ।
মাইকেল আরো ম্যাকগ্রাথ বলেন, পাচার রোধে বাংলাদেশ সরকার চমৎকার সব পলিসি গ্রহণ করছে এবং দেশটির আধুনিক আইনও রয়েছে, কিন্তু তার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটছে না। ফলে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে বেসরকারি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান জানান।
মিজানুর রহমান বলেন, মানবাধিকার কমিশন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শিশুশ্রম রোধের ব্যাপারে একটি স্ট্র্যাটিজি প্লান তৈরি করবে।
এছাড়া কমিশন ভূক্তভোগী বা অপরাধী কিশোরদের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে ইতোমধ্যে কিছু সুপারিশ পেশ করেছে।
মাইকেল শিপার বলেন, বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম রয়েছে। এটা এখন আর্ন্তজাতিক সমস্যা। তবে বাংলাদেশে শিশুশ্রম রোধে সরকারের ‘উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও দক্ষতা’ উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। এর তৃতীয় পর্যায়ের প্রশিক্ষণ এখন চলছে।প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ইতোমধ্যে ১৪ হাজার শিশুশ্রমিককে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত ৫০ হাজার শিশুকে স্কিল করে তোলা হবে।
রোখসানা হোসেন বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ শিশু পাচার হচ্ছে তার সিংহভাগ যাচ্ছে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে গঠিত টাস্কফোর্সের কারণে বর্তমানে উভয় দিক থেকেই পাচার অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের পুলিশ বাহিনীর মনিটরিং সেলের কারণেও এ ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
এডভোকেট ফৌজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, অভিভাসনের আড়ালে পাচারের ঘটনা বেড়ে চলেছে। তাই শিশুশ্রম ও পাচার রোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
Leave a Reply