নয় মাস জটিলতার পর ১৫ বছরের জন্য চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর টু-জি লাইসেন্স নবায়ন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসি।ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু মঙ্গলবার গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও সিটিসেলের প্রতিনিধিদের হাতে নবায়নকৃত লাইসেন্স তুলে দেন।বিটিআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু, মন্ত্রণালয়ের সচিব সুনীল কান্তি বোস, বিটিআরসি চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়া আহমেদ, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টোরে জনসন, রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ক্যুনার, বাংলালিংকের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার (সিটিও) আহমেদ ফাদি এবং সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব চৌধুরী ও বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।লাইসেন্স নবায়নের জন্য এবার চার অপারেটরকে সব মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা ফি দিতে হচ্ছে। গত বছর নভেম্বরে তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, লাইসেন্স নবায়নের এই দিনের মাধ্যমে বিটিআরসি ও অপারেটরদের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন সৃষ্টি হল। ভবিষ্যতে অপারেটর ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
টেলিকম খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানান রাজু। আগামীতে থ্রি-জি আসছে এবং সব অপারেটররা যেন এ সার্ভিস পায় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে, বলেন তিনি।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইনু বলেন, “টু-জি লাইসেন্স নবায়নের মাধ্যমে প্রমাণ হল, বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত জায়গা। এ সেক্টরে যেন আরো বিদেশি বিনিয়োগ হয়, সে উদ্যোগ নিতে হবে।”
টু-জি লাইসেন্স নবায়ন এবং দেনা-পাওনা পরিশোধের বিষয়ে অপারেটরদের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত মিটিয়ে ফেলে ৭ দিনের মধ্যে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য গত বুধবার বিটিআরসিকে চিঠি দেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
পরদিন চার অপারেটরকে চিঠি দিয়ে লাইসেন্স নবায়নের বিষয়টি জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
এই লাইসেন্স নবায়নের জন্য বিটিআরসি গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত নীতিমালা প্রকাশ করলেও অপারেটরদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
ফলে ১০ নভেম্বরের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বিটিআরসির পক্ষ থেকে অপারেটরদের লাইসেন্স দেওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
সরকার ও অপারেটরদের মধ্যে তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার পর লাইসেন্স নবায়নের উদ্যোগ নেয় বিটিআরসি।
লাইসেন্স পাওয়ার পর সিটিসেল সিইও মেহবুব চৌধুরী বলেন, “লাইসেন্স নবায়নের পর যে নতুন যাত্রা শুরু হল, তা যেন অব্যাহত রাখতে পারি। আর এ যাত্রা যেন দেশের বৃহৎ স্বার্থে কাজে লাগাতে পারি।
“বিটিআরসি ও অপারেটররা একে অপরের সহযোগী হয়ে কাজ করার জন্য পরস্পরের আস্থা অর্জন করতে হবে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।”
গ্রামীণফোনের সিইও টোরে জনসেন বলেন,“আমরা পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য বাংলাদেশে আমাদের ব্যবসা নিশ্চিত করেছি। এর ফলে আমাদের উপর শেয়ারহোল্ডার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।”
বিটিআরসি চেয়ারম্যান জিয়া বলেন, “ভবিষ্যতে বিটিআরসি’র লক্ষ্য হবে সেবার মান নিশ্চিত করাসহ নতুন নতুন সার্ভিস প্রবর্তন করা। আজ দেশব্যাপী যে শতভাগ জনগণের কাছে টেলিকম নেটওয়ার্ক স্থাপিত হয়েছে তার জন্য অপারেটরা কৃতিত্বের দাবিদার।
অপারেটরদের মাধ্যমে দেশে ১৫ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে আগামীতে অপারেটররা তাদের সেবা আরো প্রসারিত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বর্তমানে দেশে পাঁচটি জিএসএম ও একটি সিডিএমএ অপারেটর মোবাইল ফোন সেবা দিচ্ছে। বিটিআরসির হিসাবে দেশে ৯ কোটির বেশি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন।
Leave a Reply