শাহীনশাহ…টেকনাফের হোয়াইক্যং, মডেল ইউনিয়নের ছোট্ট জনপদ জুয়াড়ী খোলা গ্রামে বসবাস করে হিন্দু-বড়ুয়া মিশ্রিত ৩৫-৪০পরিবার।পাহাড়ের পাদদেশে গহীন সরু গ্রাম,পিছনে সবুজ ধানক্ষেত ও হোয়াইক্যং খাল।অবশ্য ৩ কিলোমিাটার পর চাকমা পল্লী,যেখানে ১শ চাকমা পরিবারের বসবাস।এই ৩ কিলোমিটারের মধ্যে মুসলিম পরিবারের বসবাস,এই গাঁ গুলো ৪নং ওয়ার্ডে অবস্থিত,যেখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সরব।সে দিনের ভয়ংকর হামলায় ঘরহারা মানুষ আজও খোলা আকাশের নিচেই বসবাস করছে।বৃষ্টি হলে আরো বিপাকে পরে তারা।সরে জমিন অনুসন্ধানে দেখা ও জানা যায়, ভর দুপুরে পল্লীতে আর্তনাদ ওবেদনার হাহাকার বেদনার্ত বদনে বষে আছেন ষাটোর্ধ যিনি মৃত বলে কয়েকটি পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল সেই মিনু শর্মা ভুতি তার কাছাকাছি হলে প্রায় শতাধিক ছোট থেকে যুবক বৃদ্ধ সবাই চলে আসে।
ঘটনার বর্ণনা: রাতের সূচনা মাগরিবের মধ্যদিয়ে,নিত্যদিনের মত বিভিন্ন পেশাজীবিরা কার্যক্রম শেষে পল্লীতে ফিরতে শুরু করেছিল, ছাত্র-ছাত্রীরা পড়া নিয়ে ব্যস্ত,গৃহিনীরা রাতের খাবার তৈরী করেছিল হঠাৎ জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও আওয়াজের কিছু সংখ্যক উগ্র সাম্প্রদায়িক ¯্রােত দেখে পালিয়ে যায়,হিন্দু বড়–য়ারা।কোথাও অবস্থান করার মত জায়গা না পেয়ে নিজেকে বাচার জন্য তাদের নিরাপদ অব¯া’ন ছিল হোয়াইক্যং খাল,ধানক্ষেত এবং উচুঁ পাহাড়।অনেকেই পালিয়েযেতে পারে নাই, সেখানে পূর্ব পরিকল্পিত ও সংগঠিত হামলার তান্ডবলীলা চালাল দুষ্কৃতকারীরা।দিক বিদিক থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ,পেট্টোল,কেরোসিন দিয়ে জ্বালিয়েদেয়,নির্মম ভাংচুর চালায় বলে জানান ভস্মিভুত ঘরের মালিক যতীন্দ্র শর্মা। স্থানীয় পুলিশ ফাড়ীঁ যথাসময়ে না আসলে পুরো গ্রাম ছ্ইা ও অনেক মানুষ নিহত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকবেশী ছিল।অপুর্ব ধরেরছেলে অমুল্য ধর বলেন,আমার বৃদ্ধা মা,ছোট ছোট বাচ্ছাদের নিয়ে সারারাত ধান ক্ষেতে কাটিয়েছি। সজল শর্মা স্ত্রী সবিতা জানান, আমার সব শেষ,ঐ দিন আমার ৩বছরের মেয়ে টীনাকে নিয়ে পালিয়ে জীবন বাচিয়ে রেখেছি।বিজন মল্লিকের মেয়ে ৮মশ্রেণীর ছাত্রী কবিতা মল্লিক,মিলন মল্লিকের মেয়ে ৮মশ্রেণীর কনিকা মল্লিকের আশ্রয়াস্থান ছিলহোয়াইক্যং খাল।শর্মীলা শর্মা(৩৫),ভবানি ধর(৩০) জানান,সেই ৩সেপ্টেমাবরের মত ভয়াবহ রাত জীবনে ও দেখিনাই,পলকহীন রাত পার করলাম পানির নীচে।হামলাকারীরা ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে,ভাংচুর থামেনি ৭১ সালের রাজাকার,আলবদরদের মত লুটপাটের শিকার হওয়ার মধ্যে কালুধর (৩৫) জানান, সামনে কুরবানকে সামনে রেখে ছাগল ব্যবসায় করার জন্য ঋণ নিয়েছিলাম ৩০হাজার টাকা হামলাকারীরা লুটপাট করে নিয়ে যায়। হিন্দু বড়–য়া পল্লীতে বসবাসরতরা জানান, তাদের প্রধান টার্গেট ছিল মন্দির “সারদা সাক্ষমনি বোদ্ধবিহার” যেখানে বোদ্ধ ধর্মালম্বীদের উপাসনালয় বা প্রার্থনার একমাত্র ঠিকানা এবং পরে সকল হিন্দু বড়–য়াদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়েদেওয়া।হঠাৎ হাঁপাতে হাঁপাতে দু’জন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী চম্পা ধরও জিঠু বড়–য়া বলেন,স্যার আমরা যদি ঐ পাহাড়ের উচুতে না উঠতাম তাহলে ওরা আমাদের মেরেই ফেলতো।অসুস্থ অরুণ বালা ধর অঝোর অশ্রু জড়িয়ে বলেন আমরা তাদের কি ক্ষতি করেছি, আমাদের উপর বর্বরোচিত এই হামলা, বাকী জীবন কি ভাবে কাটাবেন এটা এখন তাকে সবচেয়ে বেশী ভাবায়।
সচেতন মহলের মন্তব্য:অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী সহ অভিজ্ঞ মনে করেন,কয়েকটি বিষয় এই ঘৃনিত হামলার সাতে জড়িত,এবং পাশে বিজিবি ও পুলিশ থাকা সত্তে ও সরাসরি হামলার বিষয় কে ভাবায়।৩কিলোমিটার পথ স্লোগান দিয়ে মিছিল করাতে প্রশাসনের সজাগ হওয়া উচিত ছিল।
বর্তমান অবস্থা:
টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ১লা অক্টোবর দুপুর ১২ টা থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সমগ্র টেকনাফ উজেলায় ১৪৪ জারি করা হয়েছে। এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং এ অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। টেকনাফ মডেল থানার ডিউটি অফিসার এ প্রতিবেদককে জানান- হোয়াইক্যং এর ঘটনার প্রেক্ষিতে এএস্আই মাহফুজ বাদি হয়ে ৭০জনকে অভিযুক্ত করে এবং বড়–য়াপাড়ার বাসিন্দা সাধন মলি¬ক বড়–য়া বাদী হয়ে পৃথক দু’টি মামলা রুজুু করেছেন। এসব মামলায় ২দিনে মোট ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও পুলিশি ধর-পাকড়,গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পল¬ী গুলোতে পুলিশ-বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ সামছুল ইসলাম মেহেদী জানান- পরিস্থিতি সম্পূর্ণরুপে শান্ত হওয়াতে গত ৫অক্টোবর বিকালে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান জেলা জামায়াতের রুকন সদস্য অধ্যক্ষ মাওঃ নুর আহমদ আনোয়ারী বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক রূপসী গ্রাম কে জানান, “ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের সঙ্গে আমি নিজেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করেছি মাত্র।এমন কি এ ঘটনায় আমি নিজেও আহত হয়েছি। তা সত্বেও আমাকে কেন জড়ানো হচেছ জানিনা।আমি ও আমার দল জমায়াতে ইসলামীর সবাই ঘটনা বন্ধে প্রসাশনকে সহযোগীতা করেছে। তার পর ও আমাকে প্রধান আসামী করার বিষয়টি কি প্রমান করে তা জনগন বিচার করবে। আমার আল¬াহই আমাকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট।
এবিষয়ে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)মোহাম্মদ ফরহাদ জানান, হোয়াইক্যং জোয়ারীখোলা গ্রামে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩৫ জনকে আটক করেছে।এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জামায়াত নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারীকে প্রধান আসামি করে ৭০
জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। সংহিসতা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি পৃথক দূ’টি মামলার প্রেক্ষিতে টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের লম্বাবিল, তেচ্ছি ব্রিজ, হোয়াইক্যং, আমতলী, লাতুরিখোলা, দৈংগ্যা কাটা, বালুখালী, উলুবনিয়া, কাঠাখালী এবং উত্তর পাড়া সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় পূরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া ঘটনায় পুলিশ প্রায় হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা দায়েরের ঘটনায় অনেক পূরুষ অহেতুক পুলিশ হয়রানী ও গ্রেফতার এড়াতে ভয়ে এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন শহরে এবং দূর-দূরান্তের আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে অনেক এলাকা এখন প্রায় পূরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।
প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিনিধি দল তাদের জান-মালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে ও তারা ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মাঝে সেই বিভীষিকাময় রাত আবারো আগমন করবে।
Leave a Reply