ডেস্ক নিউজ : মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করলেও উজ্জ্বল কান্তি দেব এখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক! বিএসসি উত্তীর্ণ তার স্ত্রী চিত্রা সরকারও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক! এ চিকিৎসক দম্পতি নগরীর প্রাণকেন্দ্রে চালু করেছেন ‘হাটহাজারী ফিজিওথেরাপী ক্লিনিক এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’ নামে একটি ক্লিনিক।
তবে চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন। চিকিৎসক (!) দম্পতি উজ্জ্বল কান্তি দেব ও চিত্রা সরকারের পরিণতির সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায় প্রবাদ বাক্যটি।
শেষপর্যন্ত বেরিয়ে আসে তাদের আসল পরিচয়। জানা গেল, তাদের পদবী ও ডিগ্রি সবই ছিল ভূয়া। রোববার ৠাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের এক অভিযানে বেরিয়ে আসে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ভূয়া ডিগ্রি ও পদবী ব্যবহার করার দায়ে পেলেন দু’বছরের কারাদন্ড, দিতে হবে সাত লাখ টাকার আর্থিক দন্ডও। না দিলে আরও তিনমাসের কারাদন্ডের খড়গ ঝুলছে ভূয়া চিকিৎসকদ্বয়ের চোখের সামনে।
পুরোটাই ভূয়া!
উজ্জ্বল কান্তি দেব নগরীর ডাক্তার পাড়া খ্যাত জামালখান এলাকায় এক ফিজিওথেরাপী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কর্মচারী ছিলেন। কিন্তু ওখান থেকে বেরিয়ে পুরোপুরি ‘ডাক্তার’ বনে যান উজ্জ্বল।
বিভিন্ন ভূয়া ডিগ্রি ও ‘ডা:’ পদবী ব্যবহার করে আট বছর আগে রোগী দেখা শুরু করেন উজ্জ্বল কান্তি দেব। আর তিন বছর আগে থেকে স্বামীর এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন স্ত্রীও।
দু’জনের ভিজিটিং কার্ডে নামের আগে উল্লেখ করেছেন ‘ডা:’ এবং ব্যবহার করেছেন ভূয়া সব ডিগ্রি।
ভিজিটিং কার্ডে দু’জনই ফিজিওথেরাপী, প্যারালাইসিস, বাত, ব্রেইন স্ট্রোক, অত্যাধুনিক চাইনীজ আকুপাংচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ফিজিওথেরাপীর উপর বিভিন্ন ডিগ্রি নেওয়ার কথা বললেও উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরণের কোন কোর্স কিংবা ডিগ্রি দেয়া হয়নি বলে চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে।
এ দুই ভূয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নগরীর গোলপাহাড় মোড়ে ‘হাটহাজারী ফিজিওথেরাপী ক্লিনিক এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’ নামে ক্লিনিক চালু করে সেখানেই প্রতিদিন রোগী দেখতেন।
এ ফিজিওথেরাপী সেন্টারের প্রচারণায় নগরীর বিভিন্ন মোড়ে সাইনবোর্ডও স্থাপন করা হয়েছে। আর এসব প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে দিনের পর দিন ভূয়া দম্পতির ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। পকেট থেকে গচ্ছা গেছে নগদ টাকা।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ দম্পতি ভূয়া পদবী ব্যবহার করে ও চিকিৎসা দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন।’
আনোয়ার পাশা বলেন, ‘উজ্জ্বল দেব ও চিত্রা সরকার তাদের অপরাধ স্বীকার করেছেন। তাই তাদেরকে বিএমডিসি আইনের তিনটি ধারায় কারাদন্ডসহ আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।’
এদিকে একই অভিযোগে ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর এ ভূয়া চিকিৎসক দম্পতিকে দু’লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এসএসসি উত্তীর্ণ ‘ডাক্তার’
রোববার ভ্রাম্যমাণ আদালত স্বামী-স্ত্রী দু’জনের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র তলব করেন। আদালতের কাছে উজ্জ্বল এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার সনদ দেখাতে পারলেও দাবি করেন, তিনি ফটিকছড়ির ভুজপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি এ সংক্রান্ত কোনো সনদ আদালতের কাছে প্রদর্শন করতে পারেননি। তবে উজ্জলের স্ত্রী চিত্রা সরকার বিএসসি পাস।
প্রতারিত হলেন তারা
কোমরের ব্যাথার চিকিৎসায় উজ্জ্বল দেবের কাছে ছুটে এসেছিলেন পটিয়ার শান্তিরহাটের বাসিন্দা হাসিনা বেগম। আর ঘাড় ও মেরুদন্ডের ব্যাথায় ভূয়া চিকিৎসক দম্পতির কাছে হাজির হয়েছিলেন বান্দরবানের ভুনজিং বম।
২৫ হাজার ও ১৫ হাজার টাকায় যথাক্রমে হাসিনা বেগম ও ভুনজিং বমের ব্যাথা দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন এ দম্পতি।
রোববার দ্বিতীয়বারের মত উজ্জ্বল দেবের কাছে আসেন তারা। এসেই জানতে পারেন, ভূয়া চিকিৎসকের খপ্পরে পড়েছেন তারা।
হাসিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাইনবোর্ড দেখে ওনার কাছে এসেছিলাম। ঘরের ছাগল বিক্রি করে চিকিৎসার ২৫ হাজার টাকা জোগাড় করেছি। কিন্তু আজকে (রোববার) এসে শুনি তিনি ভূয়া ডাক্তার।’
আর ভুনজিং বমের ছেলে লিলিয়ান বম বলেন, ‘আমরা জানতাম না তিনি (উজ্জ্বল) ভূয়া চিকিৎসক। তাই গত ২০ জুন তাকে চিকিৎসা বাবদ তাকে তিন হাজার টাকা পরিশোধ করি।’