বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা আধা বেলা হরতাল পালিত হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির দাবিতে সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেয় ১৮ দলীয় জোট।
সকাল থেকেই শীত ও কুযাশার মধ্যেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল করেন নেতা-কর্মীরা।
বিএনপির নেতা রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, আটক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে মুক্ত করার জন্য তারা এই কর্মসূচির নিযেছেন এবং দাবি পূরণ না হলে তারা আরো কঠোর আন্দোলন চালাবেন।
এছড়া তত্ত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালে তাদরে আন্দোলনও চলবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়
সকাল আটটার দিকে পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সোয়া নয়টার দিকে নাইটিংগেল মোড়ে পর পর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। সকাল থেকে বিএনপির কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরাও কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছেন।
সোয়া ১০টার দিকে কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে আরও দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। কার্যালয়ের প্রবেশমুখে অবস্থান করছেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবউন্ননবীসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী।
সংসদ ভবন এলাকা
সকাল ছয়টার দিকে সংসদ ভবনের প্রবেশ ফটকের সামনে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা উল্টে দেয় পিকেটাররা। একপর্যায়ে তারা ওই সিএনজিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
হরতালে সহিংস ঘটনা এড়াতে ফার্মগেট এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশি চৌকি বসিয়ে সন্দেহজনক যানবাহনগুলো তল্লাশি করা হচ্ছে।
মিরপুর ও গাবতলী
এখনো পর্যন্ত কোনো মিছিল বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা ও নাশকতা ঠেকাতে পুরো এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। পথচারীদের থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা।
এদিকে হরতালের মধ্যে রাজধানীতে অন্যান্য দিনের তুলনায় রাজপথগুলোতে গাড়ির সংখ্যা কম থাকলেও প্রচুর রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। সকালের দিকে ছুটির আমেজে রিকশা চলতে দেখা যায়।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলতি সপ্তাহের রোববার সারা দেশে রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ১৮ দলীয় জোট। ওই দিন সারা দেশে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সহিংসতায় নিহত হয় অন্তত দুজন।
বিএনপি জানায়, অবরোধ চলাকালে সারা দেশে চারজন নিহত, ৬০০ জন আহত ও ৪৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর প্রতিবাদে বিএনপি ওই দিন স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে মঙ্গলবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। তবে এর আগেই অবরোধের সময় গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের একটি মামলায় সোমবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পরের দিন মির্জা ফখরুলকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু আদালত তার রিমান্ড ও জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপরই ১৮ দল থেকে ঘোষণা করা হয়, এক দিনের মধ্যে (গতকাল বুধবার) মির্জা ফখরুলকে মুক্তি না দেওয়া হলে বৃহস্পতিবার আধাবেলা হরতাল পালন করা হবে।