জেড করিম জিয়া, সেন্টমার্টিন থেকে (ছবি) দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভীড়ের কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা গলাকাটা বানিজ্যে নেমে পড়েছে। হোটেল-মোটেল গুলোতে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না থাকায় এবং এতে করে স্থানীয় প্রশাসন কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় পর্যটকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিনে ২৩ ডিসেম্বর রবিবার সকালে দমদমিয়া জেঠিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকবাহী জাহাজ বে ক্রুজ, ফারহান ক্রুজ, এলসিটি কাজল, এলসিটি কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দবাদ টিকেট কাউন্টারের সামনে শত শত দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অথচ কোন কাউন্টারের সামনে মূল্য তালিকা সংযোজন না থাকায় টিকেট বিক্রেতারা (ওপেন ডেক, ডেক, কেবিন, মাষ্টার কেবিন) শ্রেনীভেদে নিজের ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করছেন। এসময় টিকেট বিক্রেতার কাছ থেকে সরকার কর্তৃক জলপথে প্রতি কিলোমিটারে জাহাজের ভাড়া কত জানতে চাইলে সে নিজেও জানে না বলে বিব্রতবোধ করেন।
নেদারল্যান্ড থেকে ভ্রমনে আসা বিদেশী পর্যটক রুড সিজার সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে সেন্টমার্টিন বিষয়ে জানতে চান বাংলাদেশ সরকারের সেন্টমার্টিন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কি কোন পরিকল্পনা নেই ? যত্রতত্র ময়লা-আর্বজনা, পরিবেশ ভারসাম্যের কথা না ভেবে ইচ্ছে মাফিক হোটেল-মোটেল নির্মাণ, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য আদায় ও পর্যটকদের জন্য গাইডলাইন ও প্রচার-প্রচারণা নেই। সেন্টমার্টিনে ভ্রমনে এসে মনে হয়েছে দ্বীপের ব্যবসায়ীরা সরকার কর্তৃক পরিচালিত নয়। অথচ বাংলাদেশ সরকার আন্তরিক হয়ে যর্থাথ ব্যবস্থাপনা ও প্রচার-প্রচারনা চালালে সেন্টমার্টিন পর্যটন খাতে অন্যতম আর্কষণ স্থান হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত লাভ করবে এবং সরকার পর্যটন খাতে বিশাল ভুমিকা রাখবে।
সিলেট জাফলং থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক শাহ আবদুল্লাহ আল মামুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভারতের পাদদেশে পাহাড়ী ঝর্না বয়ে আসা জাফলং এলাকায় প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ দেশী-বিদেশী পর্যটকের সমাগম ঘটে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও হোটেল মালিকরা প্রতিবছর পর্যটকরা যাতে হয়রানীর শিকার না হয় সেজন্য হোটেল-মোটেলের ভাড়া নির্ধারণ করে মূল্য তালিকা টাঙ্গানো হয়। পাশাপাশি প্রশাসনের মনিটরিং ও তৎপর। সে অনুপাতে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রশাসনিক কোন ধরনের তৎপরতা না থাকায় গলা কাটা বানিজ্য চালানোর ফলে পর্যটকরা হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, সারা বছর এখানে তেমন পর্যটক থাকে না। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৫ মাস ব্যবসা করে সারা বছরের পুজি তুলে নিতে হয়। তাই পর্যটকদের বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ পর্যটন মৌসুমে দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ তাদের পরিবারকে অন্যত্রে পাঠিয়ে দিয়ে বসবাসের ঘরবাড়ির কক্ষও ভাড়া দেওয়া হয়।
ঢাকা মিরপুর পল্লবী থেকে বেড়াতে আসা ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ঢাকা শহরে মাছ-মাংস, শাক-সব্জি উৎপাদনের ব্যবস্থা না থাকলেও হোটেল রেস্তোরাতে ৪ জনে ভাত খেতে যে পরিমাণ খরচ হয়, সেন্টমার্টিনে মাছের অভয়ারন্য হয়েও সে টাকায় একজনের পক্ষে এক বেলা খাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এবিষয়ে সেন্টমার্টিন বাজারের আল্লাহরদান হোটেলের মালিক নুর আহমদ উল্টো দোষ চাপলেন টেকনাফের নৌ-ঘাট ইজারাদারদের। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যখন হোটেলের জন্য খাদ্য-সামগ্রী কিনে আনি ইজারাদাররা অতিরিক্ত হাসিল আদায় করে থাকে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সামছুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো ও হোটেল-মোটেল-কটেজ, রেস্তোরায় অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং উর্ধ্বতনদের সাথে আলাপের মাধ্যমে বিষয়টি সঠিক সমাধান করা হবে যাতে পর্যটকরা ভ্রমনে এসে হয়রানীর শিকার না হয়।