হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম,টেকনাফ =
পানি নেমে যাওয়ার পর দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্র্টিনের ভয়াবহ ভাঙ্গণের ভয়াবহতা চরমভাবে ফুটে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে ইতিহাসের প্রথম দ্বীপের চতুর্দিকে একযোগে ভয়াবহ ভাঙ্গনে দ্বীপবাসী চরম আতংকিত
হয়ে পড়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিনদ্বীপ নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে । গতকাল ১ জুন সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল আমিন ও আবদুর রহমান মেম্বার সেন্টমার্টিনদ্বীপের ভাঙ্গনের কয়েকটি খন্ডচিত্র মেইল যোগে পাঠিয়েছেন। তা দেখে ধারণা করা হচ্ছে- সেন্টমার্টিনদ্বীপের অস্তিত্ব নিয়ে দ্বীপবাসীর আশংকা মোটেও অমূলক নয়। সেই সাথে তাঁরা ক্ষয়ক্ষতি প্রাথমিক একটি প্রতিবেদনও পাঠিয়েছেন। দ্বীপের বয়স্ক ব্যক্তিসহ সাধারণ মানুষের ধারণা বিলীন হয়ে যেতে পারে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। সেন্টমার্টিনদ্বীপের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন সংবাদকর্মীদের জানান -গত ২৭ মে দুপুর থেকে ১জুন পর্যন্ত প্রবল জোয়ারে সেন্টমার্টিনদ্বীপে স্মরণকালের ভয়াবহ ভাঙ্গন এবং জলোচ্ছ্বাসে ২১টি বসতবাড়ি সাগরে বিলীন, ৮টি কাঁচা ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ, ২টি ফিশিং ট্রলার সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ, ২টি বোট আংশিক ভাঙা, ৪টি কাচা ফিশারী ঘর সম্পূর্ণ ভাঙা, ৪টি কাঁচা ফিশারি ঘর আংশিক ভাঙা, ৬টি দোকান বিধ্বস্থ, পানিবন্দি ৭৬ পরিবার, এছাড়া পূর্ব বাজার হইতে কোষ্টগার্ড ও নেভী ক্যাম্প পর্যন্ত নির্মাণাধীন রাস্তা ও বঙ্গবন্ধু সড়ক হইতে আশ্রয়কেন্দ্র হইয়া পূর্ব বীচ পর্যন্ত কর্মসংস্থান কর্মসূচীর নির্মাণাধীন বাঁধ, অবকাশ হোটেল হইতে কোনার পাড়া পর্যন্ত নির্মাণাধীন রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। পুলিশ ফাড়ির বাউন্ডারী বিধ্বস্থ, পূর্বপাড়া হইতে ডেইলপাড়া হইয়া কবরস্থান পর্যন্ত সী বীচের উত্তরাংশ সম্পূর্ণ ভেঙে যায় এবং সেন্টমার্টিনদ্বীপের চর্তুরদিকে ভাঙ্গন ধরলেও সবচেয়ে বেশি মারাত্বক ভাঙ্গন ধরেছে উত্তর ও পশ্চিম অংশে বিশেষতঃ কবরস্থানের বেশিভাগই ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গিয়েছে। অনেক কবরে মৃতদেহ উম্মুক্ত হয়ে পড়েছে। সেন্টমার্টিন ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আবদুর রহমান মেম্বার ও আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও মেম্বার আলহাজ্ব নুর আহমদ জানান- সেন্টমার্টিনদ্বীপের ইতিহাসে এত অল্প সময়ের মধ্যে এধরণের ভয়াবহ ভাঙ্গন এবং জলোচ্ছ্বাস ইতিপূর্বে আর হয়নি। এমনকি ইতিহাস বিখ্যাত একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের সময়ও এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। সেন্টমার্টিনদ্বীপের পুলিশ ফাঁড়ির আইসি হারুনুর রশিদ ভাঙ্গন ও জলোচ্ছ্বাসের কথা বণার্না করতে গিয়ে জানান- জোয়ার পানি প্রবল চাপে মনে হয়েছিল সেন্টমার্টিনদ্বীপ সাগরে তলিয়ে যাবে। তথ্যনুসন্ধানে আরো জানা যায়-২৭মে দুপুরে জোয়ারের পানি ৮ থেকে ১০ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। সাগরের ঢেউ জনবসতিতে এসে পড়ে। এতে দ্বীপের চর্তুদিকে ভাঙ্গন ধরে। বেশি ভাঙ্গন ধরেছে উত্তর ও পশ্চিম অংশে এতে উত্তর পাড়ার আবদুস সালামের পুত্র হাফেজ আহম্মদ, ফজল আহমদের পুত্র শামসুল আলম, ফজল আহমদের পুত্র রবিউল আলম ,ফয়জুর রহমানের পুত্র ছদু মিয়া, সিরাজুল ইসলামের পুত্র শামসুল আলম, আবদুর রাজ্জাকের পুত্র মোঃ ছিদ্দিক, নজির আহমদের মেয়ে ফাতেমা খাতুন, হাবিবুর রহমানের পুত্র আবদুল কুদ্দুস, নজির আহমদের মেয়ে মরিয়ম খাতুন, কবির আহমদের পুত্র সাবের এবং মছিউল্লাহ, ছৈয়দ উল্লাহ, আমিন উল্লাহ, মছিউল্লাহ, ৯নং ওয়ার্ড দক্ষিণ পাড়া দুদুমিয়ার পুত্র ফজল আহমদ এবং ডেইল পাড়ার আমিন উল্লাহ, শামসুল আলম, মোঃ রফিক, ফিরুজা বেগমের বসতবাড়ি বিধ্বস্থ হয়ে বসতভিটা সাগরে বিলীন হয়ে গিয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাজারের মোঃ আমিন, মনির উল্লাহ, আলী আহমদ, হাবিব উল্লাহসহ ৬টি দোকান বিধ্বস্থ হয়েছে। তাঁরা আরো জানান- দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম অংশে অর্ধ কিলোমিটার, শীলবনিয়া পাড়া থেকে দক্ষিণ পাড়া মসজিদ পর্যন্ত,নেভী গেইট থেকে জাদিবিল কবির মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত, হোটেল সীমানা পেরিয়ে থেকে গলাচিপা পর্যন্ত ভাঙ্গন ধরেছে। #