হুমায়ূন রশিদ,টেকনাফ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্নিঝড় মহাসেনের সম্ভাব্য আঘাত পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন জরুরী বৈঠক ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া স্ব স্ব এলাকায় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও সাবরাং-শাহপরীর দ্বীপ এলাকার মানুষ টেকনাফে আশ্রয়ের জন্য আসার পথে হারিয়াখালীতে ডাকাতের দল লুটপাট চালিয়ে মোবাইল,নগদ টাকা ছিনিয়ে ব্যাপক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
১৫ মে টেকনাফ উপজেলা মিলনায়তনে দুপুরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোজাহিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন-উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিচ বাহার ইউছুপ,স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা সামছুজ্জাহান রকিবুন্নেছা চৌধুরী, এসিল্যান্ড সেলিনা কাজী, পৌর মেয়র মোঃ ইসলাম, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান, পিআইও, কৃষি, শিক্ষা, প্রানী স¤পদ মাধ্যমিক শিক্ষা, সমবায়, যুব, মহিলা বিষয়ক, আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাগণ বক্তব্য রাখেন। এতে কোস্টগার্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মিডিয়াকর্মী ও জন প্রতিনিধিসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঘূর্নিঝড় মহাসেন মোকাবেলায় করণীয় স¤পর্কে বিস্তারিত আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা রাখা, নিয়মিত ইউনিয়ন কমিটির বৈঠক, ৬টি মেডিকেল টীম গঠন, প্রয়োজনীয় গাড়ীর রিক্যুইজেশন,স্বেচ্ছাসেবকদের সতর্ক, ৯৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র সমূহের চাবি যথাসময়ে প্রাপ্তি নিশ্চিত করণ, জরুরী প্রয়োজনে শুকনো খাবার মজুদ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাসরতদের সরিয়ে আনা,ফিশিং ট্রলার সমূহ নিরাপদ স্থানে অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।তাছাড়া সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকল প্রকার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনদ্বীপ,শাহপরীরদ্বীপ,হ্নীলা ইউনিয়নের জালিয়া পাড়া,পূর্ব ফুলের ডেইল,গুদাম পাড়া, সুলিশপাড়া,ওয়াব্রাং ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়ায় বসবাসরত বাসিন্দাদের নিয়ে আশংকা প্রকাশ করা হয়। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি,পৌরসভা,ইউনিয়ন পরিষদ ও এনজিও সংস্থা সমুহের পক্ষ থকে সর্বসাধারণকে সর্তককরণ মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। এব্যাপারে টেকনাফ প্রশাসন থেকে জানানো হয়-ঘূর্নিঝড় মহাসেন পরিস্থিতি সামাল দিতে ৯৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুদ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা,৬টি মেডিকেল টীম,পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাসরতদের সরিয়ে আনা,উপকুল এলাকায় বসবাসরত লোকজন ও ফিশিং ট্রলার সমূহ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আসার মাইকিং অব্যাহত রেয়েছে। এদিকে হ্নীলা এফডিএসআর ক্লিনিকের কো-অর্ডিনেটর অজয় কুমার চৌধুরী বলেন-১জন মেডিকেল অফিসার ও ২ জন নার্স নিয়ে ১টি মেডিকেল টীম গঠন করা হয়েছে। যা ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উপদ্রুত এলাকায় জরুরী চিকিৎসা সেবা দানের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিক মিয়া বলেন- ঘূর্ণিঝড় সংকেত বলবত থাকায় বিশেষ করে সাবরাং-শাহপরীর দ্বীপের মানুষ আতংকে রয়েছি। যাতায়াতের রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় লোকজন নৌকা নিয়ে চলাচল করছে। তবে সন্ধ্যায় আশ্রয় নিতে যাওয়া লোকজনকে হারিয়াখালীতে ডাকাতির ঘটনা মর্মান্তিক। এই ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান-সেন্টমার্টিন সাগরের মধ্যবর্তী দ্বীপ হওয়ায় ঘূর্নিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে মাত্র ২টি সাইক্লোন শেল্টার,একটি বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তারপরও দ্বীপে অবস্থিত বিদ্যালয় ও হোটেল-মোটেলগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান জানান-পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় প্রায় ৪হাজার মত লোক নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ঘূর্নিঝড় মহাসেন থেকে বাঁচতে সাবরাং-শাহপরীরদ্বীপের বেশীর ভাগ মানুষ টেকনাফ সদরে অবস্থান নিয়েছে। আগামী এ ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগে অত্র এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমান সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা একান্ত জরুরী।
টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম জানান- আমার এলাকার জনসাধারন নিরাপদে রয়েছে এবং দূর্যোগ মোকাবেলার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পরবর্তী কি হয় তা আল্লাহর মর্জি।
বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মৌঃ হাবিব উল্লাহ জানান-আমরা সাগরের সাথে লড়াই করতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। লোকজন নিজ বাড়িতে অবস্থানে আছে। ঘূর্ণিঝড়ের লক্ষণ শুরু হলে প্রস্তুতি নেওয়া সবাই লোকজনকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাব।
হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান মীর কাশেম বলেন-অত্র এলাকায় ৭টি কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আমি প্রতিটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে যাবতীয় কিছু ঠিক করে রেখেছি। লোকজন সন্ধ্যার পর থেকে নিরাপদ স্থানে আসতে শুরু করায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের কর্মীরা অংশ নিচ্ছে।
হোয়াইক্যং মডেল ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী জানান-ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবেলায় যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। লোকজনকে কাটাখালী ও হোয়াইক্যং স্কুলে সরিয়ে আনা হয়েছে।
তবে সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপকূলীয় ও নিম্মাঞ্চলের মানুষ স্থানীয় সাইক্লোন শেল্টার,স্কুল-মাদ্রাসায় অবস্থান নিয়েছে। সন্ধ্যায় সাবরাং-শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় ২/৩শ নারী-পুরুষ টেকনাফে আশ্রয়ের জন্য আসার পথে হারিয়াখালীতে পর্যায়ক্রমে হামলা চালিয়ে স্বর্ণালংকার,মোবাইল,নগদ টাকা ছিনতাই করে ব্যাপক মারধর করে। ###############