বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ উপকূলে সাগরপথে অবৈধ উপায়ে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারডুবির ঘটনায় ২ জনের লাশ উদ্ধার করেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। সাগরের ঘোলারচর উপকূল ও সাবরাং ইউনিয়নের খুরেরমুখ উপকূল থেকে লাশ দুটি ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে লাশ দুটি এখনও উপকূলে না আসায় পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। মালয়েশিয়াগামী এ ট্রলারডুবি ও মানুষ পাচারের ঘটনায় ৪৮ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলাও করেছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি। টেকনাফ মডেল থানায় বৃহস্পতিবার মামলা দুটি করা হয়েছে। মালয়েশিয়াগামী ১১০ জন যাত্রী নিয়ে বুধবার ভোরে মাছধরার ট্রলারটি সাগরে ডুবে যায়। এ ঘটনার পর কোস্টগার্ড ও বিজিবি ১১ জন এবং স্থানীয় জেলে ও নিখোঁজ যাত্রীদের নিকটাত্মীয়রা অন্তত ৯০ জনকে জীবিত উদ্ধার করে।
টেকনাফে বিজিবির ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ হাসান জানান, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ভাসমান লাশ দেখে স্থানীয় লোকজন কোস্টগার্ডকে জানালে তারা ঘোলার চর এলাকা থেকে একটি লাশ উদ্ধার করেন। তিনি জানান, অন্য লাশটি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া খুরেরমুখ উপকূলে ভেসে আসে। তা দেখে বিজিবি সদস্যরা লাশটি উদ্ধার করেন।
টেকনাফ স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোস্টগার্ড কর্মকর্তা লেফট্যানেন্ট কমান্ডার ফয়েজুল কবীর জানান, বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ ঘোলার চর উপকূলে ভাসমান লাশের খবর পেয়ে তারা অভিযান চালান। সাগর উপকূলের ওই এলাকা থেকে ভাসমান একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
অন্যদিকে কোস্টগার্ড বহির্গমন অধ্যাদেশ আইনে ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে উদ্ধার হওয়া ২২ জনসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কোস্টগার্ড। এ মামলায় ২ জন মিয়ানমার নাগরিককেও আসামি করা হয়েছে বলে জানান টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, কোস্টগার্ডের মামলায় মালয়েশিয়ায় মানুষ পাচারে দালালচক্রের সদস্য রশিদ উল্লাহ মাঝি, তার স্ত্রী, আবদুর রশিদ, ‘বদ কোম্পানি’, রশিদ আলম ও আবুল কালামকে পলাতক হিসেবে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম জানান, গতকাল উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের কক্সবাজার আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বুধবার টেকনাফ মডেল থানায় বহির্গমন অধ্যাদেশ আইনে ২০ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় মালয়েশিয়াগামী ১৩ যাত্রীকে গ্রেফতার দেখিয়ে পাচারকারীচক্রের ইসমাইল, জিয়াবুল, আবদুল জলিল, হাবিবুর রহমান, গোলাম হোসেন ও সাহাব উদ্দিন নামের ব্যক্তিদের পলাতক আসামি করা হয়েছে।
মামলার আটক আসামিরা হলো টেকনাফ বাহারছড়া শীলখালীর রাহমত উল্লাহ, হেলাল উদ্দিন, হোসেন আহমদ, পূর্বপাড়ার আতিক, উত্তর পাড়ার সামসুল আলম ভুলু, শামলাপুর উত্তর পাড়ার সাইফুল, হোয়াইক্যং রইক্ষংয়ের সিরাজ, কামাল উদ্দিন, মো. শরীফ, কাঞ্জরপাড়ার আবুল কালাম, পেকুয়া উপজেলার নাপিতখালীর ইদ্রিস ওরফে রসুল আলম, শাহপরীর দ্বীপ মাঝেরপাড়ার নূরুল বশর, টেকনাফ নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরের ‘ডি’ ব্লকের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী মফিজুর রহমান।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল আলম জানান, সাগরে ট্রলারডুবি ও মালয়েশিয়াগামী আটকের ঘটনায় কোস্টগার্ড ও বিজিবি পৃথক দুটি মামলা করেছে। মানুষ পাচারের সঙ্গে জড়িত দালালদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বুধবার ভোরে বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ উপকূলে মালয়েশিয়াগামী ১১০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনাটি ঘটে। এ ট্রলারডুবির ঘটনায় সাগর ও উপকূল থেকে নৌবাহিনী, বিজিবি ও কোস্টগার্ড ২৩ জনকে উদ্ধার করে। ওই জাহাজের অর্ধশতাধিক মালয়েশিয়াগামী যাত্রী সাঁতার কেটে ও বিভিন্ন জেলে নৌকায় উদ্ধার হয়ে উপকূলে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। এখনও অন্তত ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি।
এছাড়া ২৮ অক্টোবর ভোরে একই স্থানে ১৩৫ যাত্রী নিয়ে মালয়েশিয়াগামী আরেকটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। ওই ট্রলারের অনেক যাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
Leave a Reply