কক্সবাজারের রামু উপজেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় সরকারের মদদ আছে বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া।রোববার রাতে এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, ফেইসবুকে আপলোড করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো একটি ছবিকে কেন্দ্র করে রাতের অন্ধকারে মিছিল-সমাবেশ ও হামলার ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতার নামে পরিচালিত ওই সব তৎপরতায় সরকারি দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই নেতৃত্ব দিয়েছে। সে কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সময়মতো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।’’
“আমি মনে করি, সরকারি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সময়মতো উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না। তাদের এই শৈথিল্যের কারণ খতিয়ে খুবই দেখা জরুরি”, যোগ করেন তিনি।
ফেইসবুকে কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে শনিবার রাতে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ বসতির মন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায় ধর্র্মীয় উগ্রপন্থীরা।
রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত চলা এই হামলায় রামু উপজেলার ৭টি বৌদ্ধ মন্দির, প্রায় ৩০টি বাড়ি ও দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়। হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয় আরো শতাধিক বাড়ি ও দোকানে। রোববার সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা উখিয়ার পাঁচটি বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা চালায়।
রামুতে সংঘটিত এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রেক্ষাপটে সবাইকে সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশের শান্তিপ্রিয় ধর্মপ্রায় মানুষকে এই ঘৃণ্য চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান খালেদা।
বিরোধী দলীয় নেতার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “উত্তেজনা, উস্কানি ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে যারা এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে চায়, তারা বাংলাদেশে শক্র। তারা ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী নয়।”
ঘটনার পরপরই দলের স্থানীয় সংসদ ও নেতাকর্মীদের ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি প্রশমনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, “ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা বিরোধী দলের দিকে ইংগিত করে যেসব ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যেমূলক ও আপত্তিকর উক্তি করেছেন, তা থেকে সরকারের হীন মতলব পরিস্কার হয়ে গেছে।”
এ ধরনের মন্তব্য সুষ্ঠু তদন্ত বাধাগ্রস্থ ও বিপথগামী করবে বলে তিনি মনে করেন।
দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক শান্তি ও সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার জন্য দল-মত-গোষ্ঠী-সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানান বিরোধী দলের নেতা।
“সবার প্রতি আহবান, সংখ্যালঘু নাগরিকদের জান-মাল-ইজ্জত-আবরু-সম্পদ ও উপাসনালয়কে পবিত্র আমানতের মতো সুরক্ষা করুন।’’
একই সঙ্গে এই ঘটনা নিরপেক্ষ ও উপযুক্ত তদন্ত করে জড়িত অপরাধী ও নেপথ্য উস্কানিদাতাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দাবিও জানান তিনি।
Leave a Reply