ফরিদপুর (আরটিএনএন) হেফাজতে ইসলামের ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসমাবেশে থেকে নেতারা বলেন, আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটনো হবে।
এজন্য সারা দেশের হেফাজত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রস্তুতি গ্রহণেরও আহ্বান জানান নেতারা।
এছাড়া আমার দেশ পত্রিকা চালু এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া না হলে দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে তারা বলেন, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে তারাও নাস্তিক।
সরকার ও গণমধ্যমের কঠোর সমালোচনা করে তারা বলেন, শাহবাগের নাস্তিকদের সরকার ও গণমাধ্যমগুলো নগ্নভাবে সহায়তা করছে।
ফরিদপুর শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে হেফাজতে ইসলামের আঞ্চলিক মহাসমাবেশর মূল পর্ব শুরু হয় জুমা নামাজ শেষে দুপুর ২টায়। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উঠেনে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার ফরিদপুরে মহাসমাবেশ প্রথম অংশ সকাল থেকে শুরু হয়। সকালে ফরিদপুরের স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ সফল করতে জেলার বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় জুমার নামাজ শেষ করে দলে দলে হেফাজত সমর্থকরা সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশে বিপুল সংখ্যক হেফাজত নেতাকর্মী সমবেত হন।
হেফাজত ঢাকা মহানগর নায়েবে আমির নূর হোসেন কাসেমী বলেন, স্বাধীনতা ও আলেম-ওলামাদের রক্ষার জন্যই হেফাজতের ১৩ দফা। আগামী ৫ মে ঢাকায় তৌহিদী জনতার ঢল নামবে।
নাস্তিক-মুরতাদদের দেশে ঠাঁই হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাহামুদুর রহমানসহ ফরিদপুরে ভাঙ্গায় হত্যা মামলায় হেফাজত কর্মীদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না করলে দেশ অচল করে দেওয়া হবে।
হেফাজতের কেন্ত্রীয় নেতা মুফতি মো. ওয়াক্কাস বলেন, এ সরকার ইউরোপ- আমেরিকার আদর্শের সরকার। এরা নাস্তিকদের অনুকরণে নারী নীতি বাস্তবায়নের পাঁয়তারা করছে। তারা এ দেশকে একটি জারজ রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে।
তিনি প্রশাসনকে সংযত হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকারের মেয়াদ আর মাত্র ছয় মাস, বাড়াবাড়ি করলে পালাবার পথ পাবেন না।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়েজউল্লাহ বলেন, মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন প্রমাণ করে ইসলামের পক্ষ নিলেই তার ওপর চড়াও হয় সরকার।
এমন সরকার কি ক্ষমতায় থাকার অধিকার রাখে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন, আগামী ৫ মে হবে এ সরকারের শেষ দিন। কারো রক্ত চক্ষুকে হেফাজত ভয় করে না। দেশ চালানো মতো যোগ্যতা ও ক্ষমতা সবই হেফাজত ইসলামের রয়েছে।’
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা জুনায়েদ আল হাবিব প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য করে বলেন, ঘুঘু দেখেছেন, ফাঁদ দেখেননি। ৫ মে আপনার সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াই হবে।
মহাজোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা সোজা হয়ে যান, নইলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
এদিকে, হেফাজতের ফরিদপুরে মহাসমাবেশকে ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সমাবেশকে ঘিরে গড়ে তোলা হয় তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়।
ফরিদপুর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা জহুরুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে হেফাজতের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম, মাওলানা ইছহাক, মজিবুর রহমান, জাফরউল্লাহ খানসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি-জামায়াতের সংহতি
ফরিদপুরে হেফাজতের মহাসমাবেশ মঞ্চে এসে হেফাজতের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এবং বিএনপির আরো এক কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফর।
শুক্রবার শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকার ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে হেফাজতের মহাসমাবেশ চলাকালে দুপুর সাড়ে ৩টায় কামাল ইউসুফ মঞ্চে উঠে হেফাজত নেতাকর্মীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
এছাড়া সকাল থেকেই জামায়াত ও শিবিরের বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী সমাবেশ স্থলে উপস্থিত থেকে হেফাজত নেতাকর্মীদের সহায়তা করে।
সমাবেশস্থলের পাশেই দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা হেফাজতের জন্য পানি, তরমুজ, ভাঙ্গিসহ বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করছে। এছাড়া ফরিদপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব গাড়িতে হেফাজতের সমাবেশে পানি সরবরাহ করছে।