হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম,টেকনাফ টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে অবশেষে স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ নিমার্ণ করেছে এলাকাবাসী বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এই জনপদটি মরন ফাঁেদ পরিণত হয়েছে। বেড়িবাঁধ বিলীন হওয়ার পেক্ষিতে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমও পূর্ব ও উত্তরাংশে নিয়মিত জোটারভাটা চলছে। যোগাযোগের সড়কটি প্রায় ৪ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় মানুষ নৌকা যোগে পারাপার করছে।বর্তমানে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়া পূর্ব পাশের একাংশের বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনে গোটা শাহপরীরদ্বীপ বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়া এলাকার মানুষ আতংকগ্রস্থ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। জালিয়া পাড়া এলাকার অবস্থা খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকারী পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোন প্রকার ত্রাণের ব্যবস্থা হয়নি। তাই এলাকার মানুষ নিজ উদ্যোগে বাঁধ নিমাণ করতে শুরু করেছে। একমাত্র ডাংগার পাড়া ও উত্তর পাড়া বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের ফলে জালিয়া পাড়া এলাকার প্রায় ৪’শ পরিবার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। পূর্র্ণিমা ও অমাবস্যা জো মৌসুমে পানি বৃদ্ধির ফলে জালিয়া পাড়া এলাকা পানিতে ডুবে যায়,এতে এলাকার জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সরেজমিনে শাহপরীরদ্বীপের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন স্থানে বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্টান, রাস্তা-ঘাট, চিংড়ি ঘের, পানবরজ, সুপারি বাগান ও ফসলের বীজতলা ডুবে গেছে। বিশেষ করে টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মাঝেরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, ঘোলাপাড়া, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়ক জোয়ারের পানিতে “ভরাখাল -উত্তরপাড়া ” পর্যন্ত ডুবে আছে। এমনকি শাহপরীরদ্বীপ-টেকনাফ সড়ক প্রায় ৪ ফুট পানিতে নিমজ্জিত ও ছিড়ে যাওয়ায় যোগাযোগ এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয় বাসিন্দারা নৌকা নিয়ে দূর্ভোগের মধ্যে পারাপার করছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রামগুলোতে পানি ডুকায় অধিকাংশ লোকজন উচু স্থানে আশ্রয় ও কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন আতœীয়স্বজনদের বাড়ীতে চলে গেছে। যার ফলে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে অংসখ্য বাড়ি ঘর ভেঙ্গে সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে গৃহহারা হয়ে লক্ষাধিক মানুষ মানবতর জীবন যাপন করছে। মূল্যবান জিনিসপত্র ভাসিয়ে নিয়ে যায় ও লাখ লাখ টাকার জিনিস পত্র নষ্ট হয়ে যায়। শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়া এলাকা যেন এখন মানবশূন্য এলাকায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে মাটির তৈরি ঘর গুলো ধ্বসে পড়ে গিয়েছ্।ে এখনো পর্যন্ত সরকারী ভাবে কোন ত্রান বিতরণ করা হয়নি। বিত্তবানেরা ও গা ঢাকা দিয়েছে। আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকলে ও লোকসংখ্যা অনুপাতে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। স্ইাক্লোন সেল্টারের দক্ষিণে বেড়িবাঁধ ব্যাপক ভাঙ্গণ ধরেছে। বেড়িবাঁধ সড়কটি টেন্ডার হওয়ার পরে কাজ শুরু করে সমাপ্ত না করায় রাস্তাটি ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার কারণে বেড়িবাঁধটি ভাঙ্গন ধরা শুরু করছে। জালিয়া পাড়া মসজিদ,মাদাসা, আনন্দ স্কুল সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে বিলীন হয়ে গেছ্।ে চলাচলের কোন রাস্তা নেই। টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের জনসাধারণ আশান্বিত ছিল মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলেই অবশ্যই বেড়িবাঁধের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হবে । কিন্তু সবকিছু এক নিমিষে তলিয়ে দিল অত্র এলাকার মানুষের মনের আশা আশাংকা । শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া গ্রামের জেলে আবদু শুক্কুর হতাশ হয়ে বলেন, “রমজানে মাসের শেষে ঈদ আনন্দ আমাদের কাছে নিস্ফল মনে হচ্ছে ।এদিনে ঘরে জোয়ারের পানি ডুকে রান্না-বান্না করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে সঠিক সময় সেহেরী-ইফতার করা দঃুসাধ্য হয়ে পড়েছে। আবার ভাটার সময় সেই পানি নেমে যায়। তাই স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘরের ভেতর মাঁচা বেঁধে বসবাস করছি।’ এ দুদর্শা কবে আমাদের কপাল থেকে মুছে যাবে এ প্রশ্ন । একই গ্রামের ছৈয়দ আলম বলেন, ‘ ক’দিন আগেও এখানে আরও ২০-৩০টি বসতবাড়ি ছিল। বেড়িবাঁধের ভাঙ্গণের কারণে তারা অন্যত্রে চলে গিয়েছে। দিনের বেলায় জোয়ারে পানি কোনোমতে সামলানো যায়। কিন্তু রাতে জোয়ার এলে কোথায় আশ্রয় নেব সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র থেকে জানা যায়, বঙ্গোপসাগর ও নাফনদীর দুইটি পৃথক স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের ফলে জোয়ারের পানিতে শাহপরীরদ্বীপ এলাকার অধিকাংশ গ্রামের বসতবাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় আরও একাধিক স্থানে নতুন করে বেড়িবাঁধ ও সড়ক ভেঙ্গে গেছে। এতে করে এসব এলাকায় অসংখ্য বসতবাড়ি,রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, ধানের বীজতলা ও চিংড়িঘের পানিতে ডুবে গেছে।সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড শাহপরীরদ্বীপ জালিয়া পাড়ার ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন বেড়িবাঁধের ভাঙনকৃত অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মসজিদ ও বসতবাড়িসহ ২০-৩০টি বাড়ী সাগরের বিলীন হয়ে গেছে। পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে অধিকাংশ বাড়িঘর ডুবে থাকায় অন্য এলাকার আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এমতাবস্থায় বেড়িবাধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া না হলে এ বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ এলাকা বঙ্গোপসাগরের কবল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাবে। পূর্বের একমাত্র বেড়িবাঁধটি সামান্য ভাঙ্গন ধরলে গোটা জালিয়া পাড়া এলাকা বিলীন হয়ে যেতে পারে। তিনি আরো জানান,সাগরের ভয়াবহ ভাঙ্গনে বসতভিটা সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আতংকিত এলাকাবাসী তাদের বসতভিটা রক্ষার্থে গত ১৩ আগষ্ট থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। প্রতিদিন চলছে বাঁধ নিমার্ণ কাজ । শাহপরীর দ্বীপের মহিলা মেম্বার সনজিদা বেগম তাঁর নির্বাচনী এলাকায় যেন মানুষের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং এ ব্যাপারে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার ও সরকারের প্রতি বেড়িঁবাধ রক্ষার্থে ও জরুরী ত্রাণ সাহায্যের উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবী জানান।শাহপরীরদ্বীপ উত্তর পাড়ার ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, বেড়িবাধ ভাঙ্গনের ফলে শাহপরীরদ্বীপের বিভিন্ন অংশ যেভাবে বঙ্গোপসাগরে বিলিন হয়ে যাচ্ছে, এতে তারা চরম দুচিন্তায় আছে কোন সময় সম্পূর্ণ শাহপরীরদ্বীপ বঙ্গোপসাগর গ্রাস করে ফেলে।পাউবো টেকনাফ অঞ্চলের উপ-সহকারি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, এখন বর্ষা মৌসুমে বেড়িবাধে কোন সংস্কার কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বেড়িবাঁধে নতুন নতুন ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় নাফনদী ও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকাগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়াদি উল্লেখ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিক মিয়া বলেন, এ উপকূলীয় উপজেলায় মানুষকে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পূর্ণিমা, অমাবস্যার জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলের সাথে যুদ্ধ করে আসছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার তিনটি স্থানে বেড়িবাধ ভেঙ্গে অন্তত আট হাজার পরিবারের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাটায় বসবাস করতে হচ্ছে।শাহপরীরদ্বীপের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আমিন জানান, অসময়ে কাজ করার ফলে এই মরণদশা হয়েছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা ৭৫ লক্ষ টাকা টেন্ডার নেওয়ার পরেও মাত্র দুই থেকে তিন লক্ষ টাকার বালু দিয়ে কাজ করার ফলে শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম মাঝর পাড়ার স্লুইচ গেইট থেকে উক্ত বালু দিয়ে নির্মিত বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে সাগরের পানি ডুকে আগের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি অত্র এলাকায় বেশি হয়েছে এবং ঘরবাড়ি ফেলে মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট ও অভাব দেখা দিয়েছে। ##########################
great job!