হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ … পবিত্র রমজান পরবর্তী ঈদুল ফিতরের মাস হচ্ছে শাওয়াল মাস। রমজানের পরে ফজীলতপূর্ণ রোজা সম্বলিত মাসগুলোর মধ্যে শাওয়াল অন্যতম।
শাওয়াল মাসের বিশেষ আমল হচ্ছে এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা। এ রোজাকে “শাওয়ালের ছয় রোযা” বলা হয়। মাহে রমজানের ফরজ রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসে এ ৬টি রোযা রাখা নফল বা মুস্তাহাব। তবে এ রোযা রাখা নফল বা মুস্তাহাব হলেও এর ফজীলতকে রমজানের রোযার সাথে যুক্ত করে এক বছরের রোযার ছাওয়াবের কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এ ছয় রোযার অনন্য ফজীলতের তথা রমজানের রোযার ন্যায় ফজীলত লাভের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
শাওয়ালের এ ছয় রোযার ফজীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে রয়েছে হযরত আবু আইয়ূব আনসারী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন-
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
“যে ব্যক্তি রামাজানের রোযা রাখল, অতঃপর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা রাখল, তা পূর্ণবছর রোযা রাখার মতো গণ্য হবে। ” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৪/ জামি‘ তিরমিযী, হাদীস নং ৭৫৯/ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩৩ প্রভৃতি)
অন্য হাদীসে রয়েছে “যে ব্যক্তি মাহে রামাজানের রোযা শেষ করে শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখবে, সে যেন পুরো বছর রোযা রাখলো।” (মুসনাদে আহমাদ, ৫ম খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠা/ সুনানে দারিমী, হাদীস নং ১৭)
অপর হাদীসে রয়েছে, “রামাজানের রোযা ১০ মাসের রোযার সমতুল্য আর শাওয়ালের ছয় রোযা ৬০দিন বা দুই মাসের রোযার সমান। এই হলো এক বছরের রোযা। ” (সুনানে ইবনে মাজাহ)
এ হাদীসসমূহে বর্ণিত উক্ত রামাজান ও শাওয়ালের রোযাসমূহের ছাওয়াব এভাবে নির্ণিত হয় যে, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূরাহ আন‘আমের ১৬০ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন– “যে ব্যক্তি নেক কর্ম করবে, তার জন্য দশ গুণ প্রতিদান রয়েছে।” সে হিসেবে রামাজানের ত্রিশ রোযায় ৩০০ রোযার দশগুণ তথা ১০ মাসের রোযার ছাওয়াব হয়। আর মাহে শাওয়ালের ছয় রোযায় ৬০ রোযার ২ মাসের রোযার ছাওয়াব লাভ হয়। এভাবে রামাজানের ৩০ রোযা এবং. শাওয়ালের ৬ রোযা মোট ৩৬ রোযা দশ দিয়ে গুণ দিলে ৩৬০ রোযার সমান হয়ে যায়। আর চন্দ্র বর্ষ অনুযায়ী প্রায় ৩৬০ দিনে বা ৩৫৪ দিনের কিছু বেশী এক বছর হয়। সুতরাং এর মাধ্যমে পূর্ণ এক বছর রোযা রাখার ছাওয়াব লাভ হয় ।
উল্লেখ্য, কেবল মাত্র তারাই শাওয়ালের ৬ রোযার ছাওয়াব পরিপূর্ণভাবে লাভ করবেন, যারা রামাজানের রোযা সঠিকভাবে পালন করে তারপর শাওয়ালের রোযা রাখবেন। হাদীস শরীফে ثُمَّ أَتْبَعَهُ বলে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাই যে ব্যক্তির রামাজানের রোযার কাজা আছে, তিনি প্রথমে রামাজানের কাজা আদায় করে নিবেন। তাহলেই উক্ত রোযার পরিপূর্ণ ফজীলত লাভ করবেন। তবে যদি কোন সঙ্গত উজরের কারণে তা সেভাবে আদায় করা সম্ভব না হয়, সেটা ভিন্ন কথা।
এ ছাড়াও উত্তম হল উক্ত ছয় রোযাকে রামাজানের ঈদের পর পরই রাখা এবং লাগাতারভাবে রাখা। কেননা, এতে বর্ণিত হাদীসের উপর পুরোপুরি আমল হয়। তবে কেউ যদি রামাজানের ঈদের পর পরই না রেখে আরো পরে সেই রোযা রাখেন এবং ছয় রোযা একসঙ্গে না রেখে কিছুদিন পর পর করে বা পুরো শাওয়াল মাস ভরে রোযাগুলো রাখেন, তাতেও সেই ফজীলত লাভের আশা করা যায়।
মোট কথা, যার যার সুযোগ-সুবিধা মত এক সাথে ছয় রোযা বা আলাদা আলাদা করেও রাখার সুযোগ আছে। অর্থাৎ শাওয়ালের ভিতরে ছয়টি রোযা রাখলেই হবে। অবশ্য শাওয়াল মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে, তখন সেই ছয় রোযা রাখলে, তাতে হাদীসে বর্ণিত ফজীলত পুরোপুরি লাভ হবে না। তবে কেউ তখন রাখলেও কুরআনের বর্ণনানুযায়ী প্রতিটি নেক আমলের ১০ গুণ ছাওয়াব হিসেবে ভিন্নভাবে ৬০টি রোযা রাখার ছাওয়াব লাভের আশা করা যায়।
আর এ হিসেবেই রামাজান ও শাওয়ালের রোযা ছাড়াও প্রতিমাসে তিনদিন তথা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার দ্বারা একবছরের রোযার সমান ছাওয়াব লাভ হবে বলে হাদীসে রয়েছে। তেমনিভাবে প্রতি সপ্তাহে দুইদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখার বিশেষ ফজীলতের বর্ণনা হাদীস শরীফে রয়েছে। সংগৃহীত। ##
Leave a Reply