মায়ানমারে এখনো জাতিগত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধি দল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের শরণার্থী ও অভিবাসন ব্যুরোর উপসহকারী মন্ত্রী কেলি ক্লিমেন্টস
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সফরকারী দল হিসেবে আমরা মায়ানমারের মংডু ও সিত্তু শহরে যেতে পেরেছি। সফরকালে পরিস্থিতি দেখে আমরা একটু শংকিত হয়েছি। মংডুতেও লোকজন সহিংসতার শিকার হয়েছে। তাদের নিয়ে প্রতিনিধি দল উদ্বিগ্ন। পরিদর্শনকালে আমাদের সাথে থাকা মায়ানমার সীমান্ত মন্ত্রী জানালেন, তাদের সরকারের জন্য সীমান্তের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ নিরাপত্তা বলতে এরা সিত্তুসহ রাখাইন প্রদেশের জনগণের নিরাপত্তাকে বুঝিয়েছেন। সেখানকার চলমান সমস্যা সমাধানের যোগ্য। এটা সমাধানে আমাদেরকে কয়েকটি উপায় বের করে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আরও বলেন, বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ ও অর্থনৈতিকভাবে সবল দেশ নয়। এর পরও শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দেওয়ায় জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করছি রোহিঙ্গারা স্বাধীনভাবে এবং নিরাপত্তা নিয়ে তাদের দেশে ফিরতে পারবে। ১০ বছর আগে এখানে অন্যান্য শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে আমি যে সংকট দেখেছি তা এখনো রয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও সমস্যায় জর্জরিত। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বাংলাদেশে ৫৪৭টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ১১৬ সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল ময়ানমারে তিনদিন অবস্থান করে রাখাইন প্রদেশের সিত্তু ও মংডু পরিদর্শন করে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে। ওইদিন ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের দু’জন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি) গত বুধবার কক্সবাজারে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ও গতকাল বৃহস্পতিবার টেকনাফ লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন করে।
প্রতিনিধি দল গতকাল লেদা রোহিঙ্গা বস্তিতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলেন। লেদায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তারা পৌঁছলে রোহিঙ্গারা সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন স্লোগান ও দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। প্রতিনিধি দল ক্যাম্পের মুসলিম এইড ইউকে পরিচালিত স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রও পরিদর্রে।
এদিকে টেকনাফে রোহিঙ্গা প্রতিরোধ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম ইউনুছ বাঙ্গালি। বক্তব্য রাখেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিজবাহার ইউছুপ, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আলম, হ্নীলার চেয়ারমান মাস্টার মীর কাসেম, হোয়াইক্যং চেয়ারম্যান নুর আহম্দ আনোয়ারী, সেন্টমাটিনের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, সাবরাং চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান প্রমুখ।
সভায় বক্তারা, টেকনাফ এলাকায় রোহিঙ্গা প্রতিরোধে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানান। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও কোস্টগার্ড শক্ত অবস্থান নিলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধ করা সম্ভব বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন।
Leave a Reply