রূপের সঙ্গে গুণের মেলবন্ধন ঘটিয়ে ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০১২’ এর সেরা সুন্দরীর মুকুট জয় করে নিলেন কুমিল্লার মেয়ে সামিয়া সাইদ। তুমুল প্রতিযোগিতার পর বিচারকের রায় ও দর্শকের ভোটে গতকাল তিনি সেরা সুন্দরী নির্বাচিত হলেন। সামিয়া এখন সৌন্দর্যের আকাশে নতুন তারকা। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার সপ্তম আসরে বিজয়ী সামিয়া একই সঙ্গে পুরস্কার হিসেবে ঝুলিতে পুরেছেন ব্র্যান্ড নিউ ফোর্ড সিয়েস্তা গাড়ি। পেয়েছেন অভিনয়ের ওপর একটি আন্তর্জাতিক বৃত্তি। গতকাল ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে অনুষ্ঠিত হয় লাক্স সুপারস্টার প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। শরতের সন্ধ্যায় বর্ণিল আয়োজনে শুরু হয় এবারের আসর। সারাদিনের তপ্ত রোদ শেষে শরতের স্নিগ্ধ বাতাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালের জমকালো আসর। মেধা ও সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা, স্টেজে পারফর্ম্যান্স- সবকিছুতে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠেছিল। এবারের প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হলেন ঢাকার মেয়ে প্রসুন আজাদ এবং দ্বিতীয় রানারআপ হলেন পাবনার মেয়ে সামিহা হোসেন খান। প্রথম রানার আপ প্রসুন পেয়েছেন নগদ পাঁচ লাখ টাকা। দ্বিতীয় রানার আপ সামিহা পেয়েছেন নগদ তিন লাখ টাকা। প্রতিযোগিতায় চতুর্থ থেকে দশম হওয়া প্রতিযোগী প্রত্যেকে পেয়েছেন এক লাখ করে টাকার চেক।
সেরা সুন্দরী সামিয়া সাইদের হাতে অনুষ্ঠানে পুরস্কার তুলে দেন এশিয়াটিকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান নূর, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্র্যান্ড বিল্ডিং ডিরেক্টর কেএসএম মিনহাজ। সামিয়ার মাথায় বিজয়ীর মুকুট পরিয়ে দেন গতবারের প্রতিযোগিতার সুপারস্টার রাখি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এ প্রতিযোগিতার আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কেএসএম মিনহাজ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীদের মেধা ও সৌন্দর্য বিকাশে ইউনিলিভার এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে চলেছে। এর মাধ্যমে নারীরা তাদের প্রতিভা বিকাশে সুযোগ পাচ্ছেন’। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ফরিদুর রেজা সাগর।
শুক্রবার আয়োজিত গ্র্যান্ড ফিনালেতে সেরা পাঁচ সুন্দরীর মধ্যে চলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার মধ্যে সেরা সুন্দরী নির্বাচিত হতে সৌন্দর্য ও প্রতিভার মেলবন্ধন ঘটিয়ে লড়ে যান পাঁচ রূপসী সাদিয়া আরজুমান্দ বানু, সামিহা হোসেন খান, প্রসুন আজাদ, সামিয়া সাঈদ ও ফাতিমা জোহরা ঈশিতা। কে হাসবেন শেষ হাসি আর কার মাথায় উঠবে বিজয় মুকুট—এমন ভাবনায় ধাপে ধাপে নিজেদের সর্বোচ্চ মেধার উপস্থাপন করেন সুন্দরীরা। হাজারো সুন্দরীকে টপকে চূড়ান্ত পর্বে উঠে আসেন এই পাঁচ সুন্দরী। গতকালের অনুষ্ঠান শুরু হয় লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার গত আসরের প্রতিযোগীদের মুগ্ধকর পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এতে অংশ নেন শানু, সোমা, চৈতি, মম, আলভী, রাহা, চৈতি, অরবী, লিসানী, মেহ্জাবিন, স্বর্ণা, মাশিয়াত, রাখি ও টয়া। তাদের পরিবেশনার পর মঞ্চে ক্যাটওয়ার্ক করেন এবারের আসরের সেরা দশ সুন্দরী। তারপর অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে মঞ্চে আসেন সেরা পাঁচ সুন্দরী। গোলাপী পুষ্পের মাঝ থেকে তারা বের হয়ে আসেন। এরপর তারা সালসা নৃত্য পরিবেশন করেন। মঞ্চে ‘রাত কাটে নির্ঘুম বসে নিশ্চুপ’ পরিবেশন করেন ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ডস। তারা মঞ্চ ত্যাগ করার পর বিচারকদের প্রশ্নবানের সামনে পড়েন সেরা পাঁচ সুন্দরী। মজার আর বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিয়ে তারা জয় করে নেন বিচারকদের মন। এরপর সেরা পাঁচ সুন্দরীর প্রতি নিজেদের সঙ্গীত নিবেদন করেন ফুয়াদ নাসের বাবু, কাজী হাবলু, মুনির হোসেন, লাবলু বাংলাদেশ ও সাশা পিংকাস।
অনুষ্ঠানে সেরা ১০ সুন্দরীর মধ্য থেকে পন্ডস বিউটিফুল স্কিন, কোজআপ বিউটিফুল স্মাইল এবং সানসিল্ক বিউটিফুল হেয়ার পুরস্কারও প্রদান করা হয়। এই তিন পুরস্কার জিতেছেন যথাক্রমে তারিন, সামিহা ও নাদিয়া। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন যথাক্রমে ২০০৫ সালের বিজয়ী শানু, ২০০৯ সালের বিজয়ী মেহ্জাবীন ও ২০০৮ সালের বিজয়ী চৈতি। খেতাবের স্বীকৃতির পাশাপাশি তাদের প্রত্যেকের হাতে ১ লাখ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়।
‘সৌন্দর্যে বাঁচো’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত এবারের লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার আসরের প্রধান বিচারক ছিলেন জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, তৌকির আহমেদ ও তারিন। গ্র্যান্ড ফিনালেতে অতিথি বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মুনমুন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে শুরু হয় লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টারের সপ্তমবারের এ আয়োজন। এবার প্রথমবারের মতো ছিল ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি। এবার কয়েক হাজার সুন্দরী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। পত্রিকার মাধ্যমে কয়েক হাজার প্রতিযোগী অডিশনে অংশ নেন। সেখান থেকে প্রথম ধাপে ৩শ’ জনকে নির্বাচন করা হয়। যারা ঢাকায় অডিশনে অংশ নেন, তাদের মধ্যে থেকে বেছে নেয়া হয় ৫০ জনকে। সেখান থেকে ৩০ জন, এরপর ২০ জন। তাদের নিয়ে বুট ক্যাম্পে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ প্রশিক্ষণগুলো পরিচালনা করেন জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক ও ফ্যাশন ডিজাইনাররা। সেখান থেকে বাছাই করে শীর্ষ দশ সুন্দরীকে নিয়ে শুরু হয় গ্রুমিং সেশন। সেখানে ফ্যাশন থেকে শুরু করে মডেলিং, বিউটি, গ্লামার, নাচ ও অভিনয়ের ওপর দক্ষতা বিবেচনা করে বেছে নেয়া হয় সেরা পাঁচজনকে।
২০০৫ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টারের প্রথম আসরে বিজয়ীর মুকুট পরেন শানারৈ দেবী শানু। ২০০৬ সালে জাকিয়া বারী মম, ২০০৭ সালে বিদ্যা সিনহা মিম, ২০০৮ সালে চৈতি। ২০০৯ সালে মেহ্জাবিন ও ২০১০ সালের শিরোপা জিতে নেন রাখি। ২০১১ সালে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি।
Leave a Reply