আল-মাসুদ,নীলা ………..রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কার্যক্রম ৭ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। অদৃশ্য এক শক্তির বেড়াজালে আবদ্ধ এ প্রত্যাবাসন কবে চালু হবে তা কেউ জানেনা। যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতাদেশ গুলো রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্ভেগ প্রকাশ করে চললেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যাপারে এসব দাতা দেশ গুলোর কোন আন্তরিকতা লক্ষ করা যাচ্ছেনা। এ সুযোগে শরনার্থী ক্যাম্পে অবস্থান নেয়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন লোকালয়ে মিশে গেছে। জমি ক্রয় করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ ব্যবসা-বানিজ্য স্কুলে পড়া-লেখা সব কিছু চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশী নাগরিকদের মত। অনুসন্ধানে জানা যায়, সর্বশেষ ১৯৯১ সালে আসা মায়ানমারের ৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ ও মায়ানমার সরকার ইউএনইচসিআরের সহায়তায় ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম শুরু করে। ইতিমধ্যে প্রায় ২ লক্ষ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী স্ব-দেশে ফেরত যায়। ২০০৫ সালের এপ্রিলে টেকনাফ শরনার্থী প্রত্যাবাসন ঘাট দিয়ে নয়াপাড়া ক্যাম্পে এক পরিবারের ২ সদস্য মায়ানমারে ফেরত যাওয়ার পর থেকে প্রতাবাসন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। বর্তমানে টেকনাফে নয়াপাড়া শরনার্থী ক্যাম্পে ১৮ হাজার ৪’শ রেজিষ্টার্ড শরণার্থী ও সাড়ে ৩ হাজার রেশন বিহীন অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিলেও লিংক মেম্বারসহ ১৮ হাজারের অধিক এবং উখিয়ার-কুতুপালং ক্যাম্পে প্রায় ১০ হাজার রেজিষ্টার্ড শরনার্থী ও আড়াই হাজার রেশন বিহীন অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাওয়া লিংক মেম্বারসহ সাড়ে ১২ হার রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টার দাবী করে। কিন্তু বাস্তবে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরনার্থী ক্যাম্পের আশপাশে অবৈধভাবে অবস্থান নিয়েছে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এছাড়া টেকনাফের লেদায় প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা অনিবন্ধিত অবস্থায় রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত কক্সবাজার উখিয়া-টেকনাফের জায়গায় অবাধে বিচরণ করে খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অপরাধ কর্ম সংগঠিত করে চলেছে। বিভিন্ন জায়গায় সংগঠিত অপরাধ কর্মে জড়িত রোহিঙ্গারা বিভিন্ন এনজিও সংস্থার সহায়তায় ও দেশীয় কিছু দালালদের নিয়ে আইনী ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরা অপরাধ কর্ম সংগঠিত করে চললেও স্থানীয় অধিবাসীরা প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি উখিয়া-টেকনাফে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে সরকাররে নজরে আনার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। টেকনাফের শ্রমবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে বার বার বাধার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিরোধ কমিটি। রোহিঙ্গা শ্রমিকের পক্ষ নিয়ে দেশীয় হোটেল মালিক ও রিক্সা মালিক শ্রমিকরা উল্টা প্রতিরোধ কমিটির বাংলাদেশীদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে প্রতিরোধ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শরনার্থী অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক এসিসট্যান্ট সেক্রেটারী এরিক স্টুয়ার্জস গত বছরের ৭ জুন রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে এলে সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন সমস্যা স্থায়ী সমাধান সম্ভবপর নয়। তাই এদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে স্থানীয়দের দেখা উচিৎ। এ ক্ষেত্রে মার্কিন সরকার সব রকমের সহযোগীতা দিয়ে যাবে। বর্তমানে মিয়ানমারে রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন সমস্যার স্থায়ী সমাধান কবে হবে এখন তাই-ই দেখার বিষয়।====
Leave a Reply