মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসে ভয়াবহ রামু ট্রাজিডি ও খুন ডাকাতিসহ নানা অঘটন ঘটিয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে এখান থেকেই সু-কৌশলে বিদেশ পাড়ি দেয় রোহিঙ্গারা। তাই বিদেশ যেতে কিভাবে তারা ভুয়া পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে, কারাই বা এসব রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডে জড়িত থেকে ভিনদেশি সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করছে সে সব বিষয় খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি বিশেষ টিম কক্সবাজার এসে কাজ করছেন। ওই টিমের সদস্যরা গত কয়েকদিন ধরে টেকনাফের নয়া পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার জেলা শহরের পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আশির দশকের গোড়ার দিকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ব্যবসার খাতির দেখিয়ে এ অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়ে যায় ধারাবাহিকভাবে। পরবর্তীতে ’৯০ দশকের প্রথম পর্যায়ে ঢালাওভাবে টেকনাফ এবং উখিয়াসহ সীমামেত্মর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে। এটার ব্যাপ্তি বাড়ে বেপরোয়াভাবে। মিয়ানমারের নাসাকা কর্তৃক সে দেশের মুসলিম সংখ্যালঘুদের অত্যাচারের ধুয়ো তুলে এই অনুপ্রবেশের মূল কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। সেই সাথে মানবাধিকার বিষয়টি বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ সরকার ওই সব রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে বসবাসের সুযোগ করে দেয়। তখন থেকে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরম্ন করে। এরপর থেকে রোহিঙ্গাদের ভয়াল থাবায় উখিয়া-টেকনাফসহ পুরো কক্সবাজার ছাড়িয়ে এখন দক্ষিণ চট্টগ্রাম দিনদিন ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছে। এ দু’টি উপজেলার বিভিন্নস্থানে ভিক্ষাবৃত্তির ছদ্মাবেশে ঘর-বাড়ি ও দোকান-পাটে চুরি-ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, দখলবাজি, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড সংঘটিত করে জেলার আইনশৃঙ্খলার মারাত্বক অবনতি ঘটায় রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ গত ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর পৃথকভাবে রামু , উখিয়া ও টেকনাফে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন্দির ও তাদের বসত বাড়িতে হামলা চালানোর নেক্কার জনক ঘটনা ঘটে। যা দেশ এবং বহিঃবিশ্বের দরবারে সর্বত্র নিন্দার জড় উঠে। আর বহুল আলোচিত সেই ঘটনায়ও অসংখ্য রোহিঙ্গা এবং তাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরএসও’র সম্পৃক্ততা পেয়েছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। ইতোমধ্যে একজন আরএসও নেতাসহ অনেক রোহিঙ্গাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবা করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, অনেক রোহিঙ্গা রামু ট্রাজেডির মত ঘটনা ঘটিয়ে আশ্রয়ের দেশ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দেয়। এরিমধ্যে অনেকেই চলে গেছে বিভিন্ন দেশে। তারা কৌশলে ভুয়া পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বিশেষ একটি সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রামের মোড়ল কিংবা স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরাই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের জাতীয়তা সনদসহ পাসপোর্ট বানানোর প্রয়োজনীয় সব কাগজ পত্র সংগ্রহ করতে সহযোগিতা করে থাকেন। যদিও এমন অভিযোগ মানতে নারাজ অভিযুক্তরা। অপরদিকে পাসপোর্ট অফিস এবং পুলিশ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট প্রদানকারী দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের ব্যর্থতা রয়েছে কিনা সে বিষয় গুলো খতিয়ে দেখতে এবার সরেজমিন খোঁজ খবর নিচ্ছেন সরকার। তাই রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট কিভাবে মিলছে সেই অভিযোগ তদন্তে সরকারের নির্দেশনায় মাঠে নেমেছে স্বয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একটি বিশেষ তদন্ত টিম। তারা এখন কক্সবাজার অবস্থান বলে খবর পাওয়া গেছে। ৭ সদস্যের ওই টিমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম। জানা গেছে, তদমত্ম টিমের সদস্যরা গত কযেকদিন টেকনাফ ও উখিয়ার দু’টি শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এরপর ১৮ নভেম্বর সকালে কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসসহ সংশিস্নষ্ট সব সরকারি অফিসে তদমত্ম কার্যক্রম চালিয়েছেন টিমের সদস্যরা। সন্ধ্যায় তারা কক্সবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার মো. আজাদ মিয়া ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বাবুল আক্তারের সাথে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট সংক্রামত্ম বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আলোচনা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
Leave a Reply