আজাদী প্রতিবেদন= আগামী ১২ মে রোববার সারা দেশে সকাল–সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে হেফাজতে ইসলাম। এছাড়া আজ ও আগামীকাল ১৮ দলের হরতালে সমর্থন দিয়েছে তারা। গতকাল হাটহাজারী দারুল উলুম মাদরাসায় হেফাজতে ইসলামের সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ও গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেওয়া হয়। ঢাকার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানানো হয়। আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফীর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি ছিলেন না। এ ব্যাপারে বলা হয়, হেফাজতের ঢাকা কর্মসূচি ও দীর্ঘ ভ্রমণের কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল থাকায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি।
হরতালে সমর্থনের ব্যাপারে হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, ইসলাম, ঈমান ও আকিদা রক্ষায় যদি আওয়ামী লীগও হরতাল আহ্বান করত সেখানেও হেফাজত সমর্থন দিত। সংবাদ সম্মেলনে গত ৫ ও ৬ মে সারা দেশে নিহত বা নিখোঁজ নেতাকর্মী ও তৌহিদী জনতার নাম ও পরিচয়ের তালিকা স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের জেলা কমিটিকে জানানোর জন্য বলা হয়। জেলা কমিটি প্রয়োজনীয় যাচাই–বাছাই শেষে কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানাবে।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী। বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। আমরা এমন এক সময় আপনাদের সাথে কথা বলছি, যখন এদেশের আলেম সমাজ ইতিহাসের এক নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের শিকার। এমন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে ইতোপূর্বে আর ঘটেনি। এমন এক সময় কথা বলছি, যখন এদেশের নিরীহ আলেম ও ধর্মপ্রাণ মানুষের রক্তের দাগ এখনো রাজপথে লেগে আছে, লাশ পড়ে আছে হাসপাতালের মর্গে, অজানা স্থানে। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসার টানে ঘর থেকে বের হওয়া হাজার হাজার নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ এখনো ঘরে ফিরেনি। তারা কোথায় কি অবস্থায় আছেন, জীবিত আছেন কিনা আমরা কিছুই জানতে পারছি না। এমন ভয়াবহ বীভৎসতা যুদ্ধাবস্থাকেও হার মানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় ৫ মে রাতে ধর্মপ্রাণ আলেম–ওলামার ওপর পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বিশেষ অভিযানের নামে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। সাথে সাথে লাশ গুম করা হয়েছে। লাশের সংখ্যা আড়াই থেকে তিন হাজার পর্যন্ত হতে পারে বলে তারা জানান। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা বাবুনগরীকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নেতৃবৃন্দ। অন্যান্য শত শত আলেমকে গ্রেপ্তার করার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
‘এর আগে ৫ মে দুপুর থেকে গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম বিজয়নগর দৈনিক বাংলার মোড় এলাকায় বিনা উস্কানিতে পুলিশ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা শাপলা চত্বরগামী মিছিলের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করে অসংখ্য লোককে হত্যা ও আহত করেছে। যা টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশ–বিদেশের মানুষ সরাসরি দেখেছে। তারা সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। পরে তার দায় হেফাজতে ইসলামের ওপর চাপানো হয়।’
তিনি বলেন, ১৩ দফা দাবি পেশ করে সরকারকে সময় দিয়েছিলাম। সরকার তা বাস্তবায়নের ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দেয়নি। তারা আন্দোলন দমনের পথ বেছে নিয়ে অন্যায় অবিচার ও জুলুম করেছে। ৬ এপ্রিলে লংমার্চ, ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার হয়েছে, এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আলেম সমাজ ঘরে ফিরে যাবে না। সরকার আমাদের আর বের হতে না দেয়ার হুমকি দিয়েছে। তারা বর্তমানে যে আচরণ করছে সেটা যে স্বাভাবিক আচরণ নয়, তা দেশের মানুষ বুঝতে পারছে।
মাওলানা আশরাফ বলেন, আলেম সমাজ রাজনীতি করে না। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা নামানোর জন্য আলেমদের আন্দোলন নয়। সরকারকে সর্বশেষ সুযোগ দিয়ে বলতে চাই, আমাদের হাজার হাজার লোককে শহীদ করেছেন। হাজার হাজার লোককে আহত করেছেন। আমাদেরকে হত্যা করে আমাদের ওপর উল্টো মামলা দেয়ার চেষ্টা করছেন। এই পথ পরিহার করুন। দ্রুত আলেম সমাজের কাছে ক্ষমা চান, নিহত আহতদের পরিসংখ্যান দিয়ে তাদের দাফন কাফনের ব্যবস্থা করুন। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। মামলা প্রত্যাহার করুন। হেফাজতে ইসলাম মহাসচিব আল্লমা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, এবং হত্যাযজ্ঞের বিষয় তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ শামসুল আলম, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ তৈয়্যব, মাওলানা আবু তাহের আরবি, মাওলানা হাবীবুল্লাহ, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা হারুন বিন ইজহার, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী, মাওলানা ইয়াসীন, মাওলানা আলমগীর, মাওলানা এমরান প্রমুখ।