মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক……….কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সামগ্রিক ভাবে উন্নতি হলেও কয়েকটি ইউনিয়নে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট এই বন্যায় রামুতে বৃহস্পতিবারও ৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এনিয়ে লাশের সংখ্যা ১১ জনে দাঁড়ালো। উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় রবিশস্য, মৎস্য খামার, পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শত শত গবাদি পশু ভেসে গেছে পানিতে। এখনো পানিতে ভেসে যাওয়া ৪ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন বলে খবর মিলেছে।
পানিতে ডুবে থাকায় পুরো উপজেলাজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। আভ্যন্তরিন যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধই আছে। নৌকা নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। এলাকাবাসিদের দাবি, বন্যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে রবি ফসল। কোথাও এক ফোঁটা মাঠও ক্ষতি বাঁচেনি।
বৃহস্পতিবার উদ্ধার হওয়া লাশ গুলোর মধ্যে আছেন রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের পশ্চিম নুনাছড়ি এলাকার মকবুল আহমদের স্ত্রী ছমুদা খাতুন (৬০), দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের জুম মগপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আরফান (৩), রাজারকুল ইউনিয়নের দেয়াংপাড়ার রশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ বাবুল (৩৫) ও কাউয়ারখোপের রফিক আহমদের ছেলে মোহাম্মদ হানিফ (২৭)।
রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল জানান, রামুর ১১ ইউনিয়নের প্রতিটি ইউনিয়নই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ৪ লাখ মানুষ কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে দাবি এই উপজেলা চেয়ারম্যানের।
তিনি বলেন, ‘গবাদি পশু, পোল্ট্রি ও মৎস্যখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’ তাঁর মতে, শুধু মৎস্য ও পোল্ট্রি খাতে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে।
তিনি সরকারের পাশাপাশি এনজিও গুলোকে দূর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ জানান, বন্যাদূর্গতদের জন্য পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, চিড়া ও গুড় বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি রামুকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা দাবি করে বলেন, ‘রামুকে দূর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে।’ তিনি রামুতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়ার জন্যও আহবান জানান।
তিনি জানান, রামুতে বন্যাদূর্গতদের জন্য ১০০ মে.টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
অন্যদিকে বিকালে রামু উপজেলা মিলনায়তনে দূর্গত এলাকার সহায়তা করার জন্য আলোচনায় এক মতবিনিময় সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ, ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল্লাহ হাসান ও মুশরাত জাহান মুন্নী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজকুমার শীল এবং উপজেলার ১১ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রবল বর্ষণে বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখনো পর্যন্ত রামু-মরিচ্যা সড়ক ও রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নই রয়েছে। তবে সদর উপজেলার ঈদগাঁও এলাকায় ‘নসির ব্রীজ’ বিধ্বস্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ জরুরি ভিত্তিতে চালু করা হয়েছে।
এদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানিয়েছেন, ৭০০ পুকুর ও ২৮টি চিংড়ি ঘের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
Leave a Reply