ঢাকা: বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আপনারা যেখানেই আলোচনায় বসতে চান, আমরা সেখানেই বসতে রাজি।”
বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়াকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যে কোনো সময়ে, যে কোনো স্থানে আলোচনা হতে পারে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চাই। তবে সংসদ নিরপেক্ষ জায়গা। সংসদে আসুন, সংসদেও আলোচনা হতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বাংলাদেশে একটি ইতিহাস স্থাপন করেছি। নারী স্পিকার নির্বাচন করা হয়েছে। সংসদ নেতা নারী, বিরোধীদলীয় নেতা নারী, সংসদ উপনেতা নারী। ওনারা বিরোধীদলীয় উপনেতাও নারী করতে পারেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “অন্তত সংসদে আসুন, আমরা তিনজন একত্রে একটি ছবি তুলতে পারি। সেটা ইতিহাস হয়ে থাকবে।”
লাশ গুমের ব্যাপারে বিরোধীদলীয় নেতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “উসকানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকুন। এখানে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে মৃত-জীবিতদের উদ্ধারে। উদ্ধার তৎপরতায় রেকর্ড স্থাপন করা হয়েছে।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। গণতান্ত্রিক বিশ্বে যেভাবে নির্বাচন হয়, আগামী নির্বাচন সেভাবেই হবে। আমরা চাই না ২০০৭-এর মতো ঘটনা ঘটুক। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও স্বাধীন।” হরতাল প্রত্যাহার করায় তিনি এ সময় খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “আলোচনায় আসুন, আপনাদের দাবি-দাওয়া কি আছে শুনবো। বাস্তবায়ন করা যায় করবো। দেশের জন্য যেটা ভালো হয় সেটা করবো। হরতাল পরিহার করে সংসদে আসুন। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে।”
প্রধানমন্ত্রী ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নির্বাচন দিতে পারে না। একের পর এক উপদেষ্টারা পদত্যাগ করে। এরপর যে সরকার আসে, তারা এসে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে, নির্যাতন চালায়। ওই পরিস্থিতি আমরা আর চাই না।”
“আওয়ামী লীগের আমলে সব নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয় এখানেও আগামী নির্বাচন সেভাবেই হবে।”
তিনি বলেন, “উনিও একজন নারীকে বিরোধী দলের উপনেতা বানিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। নারীর ক্ষমতায়নে আমরা যে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমি আবারো উনাকে বলবো সংসদে আসুন। তিনজন একটা ছবি তুলি যেটা ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী সাভারের ভবন ধসের উদ্ধার তৎপরতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “ঘটনা ঘটার ২০ মিনিটের মাথায় উদ্ধার কর্মীরা সেখানে পৌঁছেছে, উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। এতো দ্রুত উদ্ধার কাজ চালানো এবং এতো মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এতো জীবিত মানুষ উদ্ধার করার দৃষ্টান্ত কোথাও নেই, এ দৃষ্টান্ত আমরাই প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি।”
“ওই দিন হরতাল ছিল। হরতালের কারণে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস যাওয়া সমস্যা হচ্ছিল। সাধারণত যুদ্ধের সময়ও অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস আক্রান্ত হয় না। কিন্তু ১৮ দলের কর্মীদের হাতে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসও রেহাই পায় না,” যোগ করেন তিনি।
“আমি বিরোধী দলের নেত্রীকে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলাম। যদিও বিরোধী দলের নেত্রীর সিদ্ধান্ত নিতে বিকেল ৩টা বেজে যায়। দেরিতে হলেও প্রত্যাহার করায় ধন্যবাদ জানাই। আজও (বৃহস্পতিবার) তারা হরতাল ডেকেছিল। আমি হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানানোর পর প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। সে জন্যও আন্তরিক ধন্যবাদ। এখন আসুন আলোচনায় বসি। আলোচনা করি আপনাদের কি দাবি আছে।”
প্রধানমন্ত্রী খলেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “আমরা কলকারখানা বন্ধ করেছি বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। তিনি কোথায় দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেছেন। তিনি শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে সেখানে অবস্থিত আদমজী জুটমিল বন্ধ করে দিয়েছেন। খুলনার মিল কারখানাগুলো তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা এসে কয়েকটি চালু করেছি।”
রানা প্লাজার উদ্ধার কাজ নিয়ে সমালোচনা এবং লাশ গুম করা নিয়ে খালেদা জিয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “উনার মুখে এটা শোভা পায় না। স্পেকট্রাম ধসের পর কত লাশ উদ্ধার হয়েছিল, তা মিডিয়াতে এসেছে। তখন আমার দেশে নিউজ হয়েছিল ২৫ লাশ উদ্ধার, মৃতের সংখ্যা তিনশর বেশি।”
“উনি এখন লাশ গুমের কথা বলে উস্কানি দিচ্ছেন। উস্কানিমুলক বক্তব্য পরিহার করুন। কোন গার্মেন্টে কতজন শ্রমিক কাজ করতো তার তালিকা আছে। কেন আমরা লাশ গুম করবো আমাদের কি মানবতা নেই?”
“তিনি এটা বলতেই পারেন। উনার সময় ৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে সরকারি হিসেবে এক লাখ ৩৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। তখন মানুষ, গরু, ছাগলের লাশ এক সঙ্গে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল,” যোগ করেন তিনি।