টেকনাফ প্রতিনিধি,
টেকনাফের হ্নীলার জাদীমুরা সীমান্ত পয়েন্ট এখন মিয়ানমারের আদম বানিজ্যের অঘোষিত নৌঘাটে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন মাগরিবের পর থেকে সারা রাত চলে অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি দেখেও দেখেনা। গত ৫ জুন মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর থেকে এ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন শতশত নারী, পুরুষ ও শিশুসহ অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। তবে সম্প্রতি মাত্রারিক্তভাবে অনুপ্রবেশ ঘটছে। অনুপ্রবেশকারীরা দক্ষিন জাদীমুরার পাহাড়ের পথ হয়ে সোজা বাহারছড়ায় গিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে আদম পাচারকারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাগর পথে ট্রলারে করে পাড়ি দিচ্ছে। অনেকে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। এ ঘাটে জাদীমুরা এলাকার গোলাম কাদেরের পুত্র আবদুল আমিনসহ ্১০ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে। জাদীমুরা এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিনে বিজিবির বিওপি ক্যাম্প থাকা সত্বেও কিভাবে ঢালাওভাবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে তা সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
টেকনাফ সীমান্তের অন্যান্য পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকালে আটক করা হলেও সেক্ষেত্রে জাদীমুরা সীমান্ত পয়েন্টে ব্যতিক্রম দেখা গেছে। টহলরত বিজিবিদের ম্যানেজ করে আদম বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এই পয়েন্টে টহলরত বিজিবি সদস্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মাথা পিছু একশত টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে দমদমিয়া বিওপির সুবেদার জজ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবী করেছেন। এছাড়া টেকনাফ সীমান্তের আরো ১৪ টি সীমান্ত পয়েন্টে চলছে জমজমাট আদম বাণিজ্য। টেকনাফের প্রতিটি ভাড়াবাসায়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে, সমুদ্র সৈকতে, ঝাউবাগানে পুরাতন এবং নতুন মিয়ানমার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিতে দেখা যাচ্ছে।
মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গা-রাখাইন জাতিগত সংঘাতের ঘটনার পর মুসলিমদের ধড়পাকড় শুরু করলেও বাংলাদেশে মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিকের কোন ধড়পাকড় না থাকায় সহজেই রোহিঙ্গারা টেকনাফে এসে আশ্রয় নিতে পারছে। ফলে টেকনাফের আদম পাচারকারী ও চোরাকারবারীরা দ্বি-গুন উৎসাহে তাদের কাজ চালিয়ে যাচেছ । সূত্রে জানা যায়- বর্তমানে টেকনাফের আদম পাচারকারী দালালরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় জনপ্রতি ১ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচেছ । বিদেশে অনেক মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে, মিয়ানমার থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের আনার জন্য এসব দালালরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জনপ্রতি ২০/৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়ে তাদের আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আসছে। জানা যায়- এসব দালালরা হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া-ফেরানপুর ঘাট, জাদিমুড়া-রাইম্যাবিল ঘাট, নয়াপাড়া-গৌজিবিল ঘাট, নয়াপাড়া-মাঙ্গালা ঘাট, দমদমিয়া-মাঙ্গালা ঘাট, টেকনাফ পৌরসভা এলাকার নাইট্যংপাড়া ঘাট, জালিয়াপাড়া ঘাট, নাজির পাড়া ঘাট, শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়া ঘাট, করিডোর ঘাট ও মিস্ত্রিপাড়া ঘাট, ঘোলাপাড়া ঘাট এলাকায় বিভিন্ন কৌশলে আদম পাচার অব্যাহত রেখেছে । পাচারের সুবিধার্থে হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে এক একজন এক এক জায়গায় অবস্থান করে প্রশাসনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচেছ। হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া-ফেরানপুর ঘাট নিয়ন্ত্রন করে গোলাম কাদেরের পুত্র আবদুল আমিনসহ ্১০ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের অপর সদরা হচ্ছে নুর মোহাম্মদ, নুর কবির, আমির হামজা, জামাল, মোস্তাক, মোঃ সৈয়দ, সৈয়দ হোছন। এদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মামলা করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
নয়াপাড়া-গৌজিবিল ঘাট নিয়ন্ত্রন করে জালাল, আলম, কালুমিয়া, সৈয়দুল আমিন সিন্ডিকেট, দমদমিয়া- মাঙ্গালা ঘাট নিয়ন্ত্রনে নুরুল আলম নুরু, নয়াপাড়া ঘাট নিয়ন্ত্রন করে আবুল হাসেম, আব্দুছ ছালাম, আব্দুল জলিল সিন্ডিকেট, বরইতলী এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা এদেশে অনুপ্রবেশ করানোর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল মিয়ানমারে পাচার করে। পাচারের সময় তারা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদের কাজ নিরাপদে সমাধা করে। অভিযোগ উঠেছে এসব আদম পাচাকারীরা সংশ্লি¬ষ্টদের ম্যানেজ করে আদম বাণিজ্য ও মালামাল পাচার করে যাচেছ। তারা মিয়ানমার থেকে মাদক দ্রব্য নিয়ে আসে । এসব মাদক ব্যবসায়ও দালাল এবং আদম পাচারকারীদের শেয়ার থাকে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব কাজে নেপথ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী ও চিহ্নিত গডফাদার থাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছেনা। এভাবে রাতের অন্ধকারে অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার ফলে শাহপরীরদ্বীপ, নয়াপাড়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থান রোহিঙ্গাদের অঘোষিত রোহিঙ্গা এলাকা হিসেবে পরিণত হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে গোটা টেকনাফে। এসব এলাকায় বিজিবির উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নজর রাখলে টেকনাফ থেকে অবৈধ মিয়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিক অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান অনেকটা বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।
Leave a Reply