টেকনাফ নিউজ ডেস্ক..
গাইড ওয়াল দেয়ার বাহানা দিয়ে স্কুলের জমি বাইরে রেখে বাউন্ডারী ওয়ালের কাজ করা হচ্ছে। অথচ এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিস কিছুই জানেনা। এতে স্কুলের নামে খতিয়ানভূক্ত মূল্যবান বেশ কিছু জমি বেহাত হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এনিয়ে এলাকায় অভিভাবকসহ সর্বমহলের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী সরকারী প্রাইমারী স্কুলে চলছে এ ঘটনা। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে-১৯৩৮ সনে স্কুলটি প্রতিষ্টিত । মিঠাপানিরছড়া গ্রামে স্কুলটির অবস্থান হলেও যাবতীয় রেকর্ডপত্র অনুযায়ী নাম হচ্ছে- লম্বরী সরকারী প্রাইমারী স্কুল । মজার ব্যাপার হচ্ছে- পাশাপাশি গ্রামও নয়, মাঝখানে বিশাল আয়তনের আরও দু’টি গ্রাম রয়েছে। স্কুলের নামে রেকর্ডীয় খতিয়ানভূক্ত জমির পরিমাণ ১.৩৭ একর । স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন- সাবেক ইউপি মেম্বার জহির আহমদ এবং প্রধান শিক্ষক হলেন- মাষ্টার শহিদুল ইসলাম । জানা যায়- প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই সরকারী প্রাইমারী স্কুলের বর্তমানে কাহিল অবস্থা। স্কুলের জমি জবরদখল করে ঘিরে ফেলায় শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের স্কুলে যাতায়ত করতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই স্কুলে অধ্যায়নরত, কিন্তু খাবার বা ব্যবহারের জন্য পানির কোন ব্যবস্থা নেই। নলকূপ থাকলেও অকোজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে স্কুলের উন্নয়নে টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ৫ মেঃটন চাল বরাদ্দ দেন। আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে উক্ত চাল বিক্রি করে টাকা পাওয়া গেছে ১লাখ ৮ হাজার টাকা । অভিযোগ উঠেছে- শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যাতায়তের রাস্তা সুবিধা, পানির ব্যবস্থাসহ জরুরী কাজ না করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি তড়িঘড়ি করে গাইড ওয়ালের দোহাই দিয়ে এক পাশে বাউন্ডারী ওয়ালের কাজ শুরু করেন। অথচ স্কুলের চতুপাশ্বেই স্কুলের জমি রয়েছে। এই স্কুলের ভূ-সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ কানি। বর্তমানে নতুন-পুরাতন ৩টি ভবন এবং যৎ সামান্য মাঠসহ ২কানি জমিও স্কুলের নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। বাকি জমি প্রতিবেশী প্রভাবশালী লোকজন ক্রমে জবরদখল করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় স্কুলের জমি উদ্ধার বা রক্ষা না করে বরং উল্টো গাইড ওয়ালের দোহাই দিয়ে সরকারী অনুদানের টাকায় পাকা বাউন্ডারী ওয়াল – তাও আবার স্কুলের জমি বাইরে রেখে উপরন্তু সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী সরকারী দপ্তরকে অবহিত না করে- স্কুল ম্যানেজিং কমিটির এসব কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল দাবী করছেন- এভাবে স্কুলের জমি বাইরে রেখে বাউন্ডারী দেয়াল নির্মান করা হলে স্কুলের জমি চিরতরে বেহাত হয়ে যাবে। বর্তমানে যে স্থানে স্কুল, আশপাশের জমির মূল্য খুবই চড়া ।তাই অসাধু ব্যক্তি স্কুলের জমি জবরদখল করতে এভাবে নানান কৌশল এবং ফন্দি-ফিকির করছে বলে এলাকায় জনশ্র“তি রয়েছে। টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল আলম জানান- প্রথমেই জরুরী ছিল স্কুলের নামে রেকর্ডীয় জমি পরিমাপ ও চি˝িতকরণ । এরপর যাতায়ত সুবিধা ও পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য উন্নয়ন মূলক কাজে হাত দেয়া উচিৎ ছিল। তা না করে গাইড ওয়ালের নামে বাউন্ডারী ওয়ালের কাজ করে বির্তক সৃষ্টি করা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে স্কুলের জমি বাইরে থাকলে তা উদ্ধার বা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ ছাড়া এনিয়ে ভবিষ্যতে অপ্রীতিকর ও অনাকাংখিত ঘটনার আশংকা রয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টেকনাফ উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুব্রত কুমার ধর জানান- বিষয়টি সম্পর্কে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি বা স্কুলের প্রধান শিক্ষক অত্র দপ্তরকে অবহিত করেননি। তিনি আরও জানান- স্কুলের নামে খতিয়ানভূক্ত জমি কোন অবস্থাতেই বাইরে রাখা যাবেনা। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থাসহ স্কুলের জমি পরিমাপ, জবরদখল মুক্ত এবং চিি˝ত করে সীমানা পিলার দেয়া হবে। প্রধান শিক্ষক মাষ্টার শহিদুল ইসলাম বলেন- মাঠ ভেঙ্গে যাওয়ায় পশ্চিম-দক্ষিণ কোনায় গাইড ওয়াল দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সরজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে-মাঠ থেকে ৪ ফুট উচুঁ করে দেয়াল দেয়া হয়েছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক মেম্বার জহির আহমদ জানান- হাজী নজির আহমদ ২০শতক, হাজী মোঃ নছিম সিকদার ৪০ শতক ও হাজী মাস্টার আজিজুর রহমান ৪০ শতক মোট ১একর জমি স্কুলের নামে দান করেছিলেন। কিন্তু বিএস জরীপে অতিরিক্ত আরও ৩৭ শতক বেশী জমি স্কুলের নামে রেকর্ড হয়েছে। শেষোক্ত দাতা বর্তমানে সৌদিআরবে রয়েছেন। তিনিও গাইড ওয়াল দেয়া হচ্ছে দাবী করলেও ওয়ালের বাইরে স্কুলের জমি আছে বলে স্বীকার করেছেন। তিনি আরও জানান- স্কুল ম্যানেজিং কমিটির ২জন সদস্য বর্তমানে ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে রয়েছেন। তাঁরা ফিরে আসলে জমি দাতাগনের প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে স্কুলের জমি পরিমাপ করা হবে। ########