***ব্যাপক সাড়ার মধ্যেই মালয়শিয়ায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের অনলাইনে নিবন্ধনের কাজ ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে শুরু হয়েছে।***রোববার নিবন্ধনের প্রথম দিনে ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রগুলোতে বেশ উপস্থিতি ছিল। তবে নির্ধারিত নিবন্ধন ফির অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন তথ্য কেন্দ্রে।
এছাড়া ইন্টারনেটের গতি কম ও ডাটা এন্ট্রির জন্য পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ভোগান্তির কথাও জানিয়েছে নিবন্ধন করতে আসা ব্যক্তিরা।
পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর মালয়শিয়ায় কর্মী পাঠাতে গত ২২ অক্টোবর দুই দেশের সরকারের চুক্তি হয়। এবার শুধু সরকারি পর্যায়েই কর্মী নেয়া হচ্ছে। এজন্য আগে নিবন্ধন করতে হচ্ছে।
ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে আগামী ১৩ থেকে ২১ জানুয়ারি নিবন্ধন চলবে। রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগে ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারি এবং খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারি নিবন্ধন করা যাবে।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে। আগ্রহীদের নির্দিষ্ট দিন নিজের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এসে ৫০ টাকার বিনিময়ে নিবন্ধন করতে হবে।
এরপর ইউনিয়ন কোটাভিত্তিক লটারির মাধ্যমে সারা দেশ থেকে ৩৪ হাজার ৫০০ জনকে নির্বাচন করা হবে।
নির্বাচিতদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৪০ হাজার টাকায় মালয়শিয়া পাঠানো হবে।
তবে প্রথম ধাপে মালয়শিয়ার চাহিদা অনুযায়ী ১০ হাজার শ্রমিক পাঠানো হবে। পরে ধাপে ধাপে অন্যদের পাঠানো হবে।
ফেব্রুয়ারির শেষে অথবা মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে মালয়শিয়ায় প্রথম ফ্লাইট পাঠাতনোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নের তথ্যকেন্দ্রগুলোতে নিবন্ধনের জন্য সকাল থেকেই মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীরা ভিড় করে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য কেন্দ্রে নিবন্ধনের জন্য আগ্রহীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। সকাল ৯টা থেকে নিবন্ধনের কাজ শুরুর কথা থাকলেও ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে সাড়ে ১১টায় কাজ শুরু হয়। এখানে দুটি কম্পিউটারে ডাটা এন্ট্রি করা হয়।
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদেও ডাটা এন্ট্রিতে ধীর গতির কারণে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন নিবন্ধনকারীরা।
নিবন্ধনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ৫০ টাকা হলেও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ তথ্যকেন্দ্রে নিবন্ধনকারীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
তবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোমেন সিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাংতি না থাকায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১০০ টাকা রাখা হলেও পরে তাকে ৫০ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গাউছুল আযম বলেন, প্রথমে ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে শুরুতে ডাটা এন্ট্রিতে সমস্যা হলেও পরে তা ঠিক হয়েছে।
ডাটার এন্ট্রির কাজে জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, মঙ্গলবার নিবন্ধন শেষে ১৬ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লটারির মাধ্যমে কর্মী বাছাই করা হবে।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আফরোজ হেপীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ফি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাথরঘাটা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মো. জামাল হোসেন নান্নু জানান, রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া নিবন্ধন কার্যক্রমে কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদ ৫০ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা করে নিচ্ছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করতে গেলে তিনি ধমকের সাথে বলেন, যা নেয়া হচ্ছে তাতে আপনি রেজিস্ট্রেশন করলে করেন, নইলে চলে যান।”
একাজে দায়িত্ব পালনরত উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম জাফর সাদিক বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে ৫০ টাকার স্থলে ১২০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
তবে নুর আফরোজ হেপীর কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ১২০ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, “আমরা ফরম দেয়ার সময় ২০ টাকা করে নিচ্ছি এবং জমা নেয়ার সময় ৫০ টাকা করে নেই। অর্থ্যাৎ মোট ৭০ টাকা নেয়া হচ্ছে।”
অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কারণ জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য চার/পাঁচজন অতিরিক্ত লোককে কাজ করাতে হচ্ছে, যাদের জন্য এ টাকা নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বরগুনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী জানান, অভিযোগ পেয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে টাকা ফেরত দেয়াসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া প্রথম দিনে নিবন্ধন করতে গিয়ে নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের কারণে অনেকেই নিবন্ধন করতে পারেনি।
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রের মধ্যে ৪টিতে নিবন্ধন কার্যক্রমে বিঘ্ন হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হবে।
মহাকালী ইউনিয়ন কেন্দ্রের তদারকির জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপজেলা সমাজসবা অফিসার মো শাহজাহান মিয়া জানান, এই কেন্দ্রে একটা এন্ট্রির করার পর আর হচ্ছে না।
মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসার ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের কেন্দ্র পরিচালক নাজমুল হাসান জানান, প্রতিটি নিবন্ধন শেষ করতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লেগে যাচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি সময় লাগছে।
একারণে রাতে হলেও সবার নিবন্ধন করা হবে বলে জানান তিনি।
বিকেল ৪টায় পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ৫০ জন নিবন্ধন করতে পেরেছেন, তখন অপেক্ষমান ছিল দেড়শ জন।
নিবন্ধন করতে আসা সদর উপজেলার সরকার পারার মো রনি মিয়া বলেন, কম খরচে সরকারিভাবে এই সুযোগ পাওয়ায় আমি অনেক খুশি।
ফিরিঙ্গি বাজারের জুয়েল সাহা জানান, তিনি এখন সিমেন্ট কারখানায় কাজ করেন। এর আয় দিয়ে ঠিকমত সংসার চলে না। তাই বেশী উপার্জনের জন্য মালয়শিয়ায় যেতে চান তিনি।