রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগের অংশ হিসাবে সীমান্তবর্তী ১৩ উপজেলার ১৭ হাজার আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার ১৩ উপজেলায় এসব আবেদন নাকচ হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী অধ্যুষিত’ এ অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার আবেদন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
গত ২ জানুয়ারি হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হয়। আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এর ওপর দাবি-আপত্তি ও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। এ সময়ে সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে বাদ পড়া ভোটাররাও তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।
৩১ জানুয়ারির মধ্যে সারা দেশের ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।
গত বছর থেকে দেশের অন্যান্য জায়গার মতো পার্বত্য এ তিন জেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হয়। এ কার্যক্রম চলে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
তালিকা হালনাগাদের সময় সীমান্তবর্তী এসব উপজেলায় ভোটার হওয়ার যোগ্যদের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি ‘রোহিঙ্গা’ ঠেকাতে বাবা-মা, দাদা-দাদী, জমি-জমাসহ অন্তত ১৫ ধরনের উপাত্ত চায় নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কমিটি।
ভোটার তালিকার আগে সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের সদর উপজেলা, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া ও মহেশখালী, বান্দরবানের সদর উপজেলা, আলিকদম, লামা, নাইক্ষংছড়ি, রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলায় বিশেষ কমিটিতে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনও আমলে নেয়া হয়।
ভোটার তালিকায় বাদ পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে কক্সবাজার জেলায়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নুরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজে তথ্য সংগ্রহ এবং বিশেষ কমিটির বাছাইয়ের পর প্রায় ১৫-১৬ হাজার আবেদন বাদ দেয়া হয়। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের তালিকাভুক্ত করা হয়নি।”
অবশ্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
নুরুল হাসান বলেন, “অনেকে প্ররোচনায় বা ভুয়া তথ্য দিয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষ কমিটির বাছাইয়ে তারা বাদ পড়ে।”
যাছাই-বাছাইয়ের জন্য দুই সপ্তাহ ‘অনেক কম সময়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এবার এখানে প্রায় ৯ শতাংশ ভোট বেড়েছে। সীমান্তবর্তী এ জেলার সাত উপজেলায় বিশেষ ফরম বাছাইয়ের জন্য আরো সময় পেলে আরো ভালো হতো।”
খসড়া তালিকা প্রকাশের পর অন্তত তিনশ’ আবেদন নতুন করে জমা পড়েছে বলেও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান।
বান্দরবানের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ জানান, এ জেলার সীমান্তবর্তী চার উপজেলায় এবার প্রায় এক হাজার আবেদন বাতিল হয়েছে।
তবে রাঙামাটি জেলার চিহ্নিত দুই বিশেষ উপজেলায় মাত্র ১১টি আবেদন নাকচ করা হয়েছে বলে জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন।
“আমার এখানে অনুপ্রবেশকারীদের উৎপাত তেমন নেই,” বলেন তিনি।
তিন নির্বাচন কর্মকর্তাই জানান, গোয়েন্দা সংস্থা ও ইসির ‘বিশেষ সতর্কতার’ কারণে এবার ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ ভোটার হওয়ার সুযোগ পায়নি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকার আগেও যেসব অভিযোগ আসবে সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো যাছাইয়ের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ এলাকায় জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়টি বুধবার কমিশন সভার আলোচ্যসূচিতেও রয়েছে।
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর আঞ্চলিক প্রতিনিধি রেমন্ড হলের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি জানান, বর্তমানে দুটি ক্যাম্পে দুই হাজার ৮০০ জন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাইরে আরও প্রায় চার লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছেন।
তিনি সে সময় বলেছিলেন, “এরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে বাংলাদেশের জন্য বোঝা। এরা দেশের আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।”
রোহিঙ্গারা ভোটার হয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশে গিয়ে নানা ‘অপকর্মে’ জড়াচ্ছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির অপচেষ্টা রোধের উদ্যোগ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ আহম্মদ খান বলেন, “যোগ্যদের সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি রোহিঙ্গা বা অনুপ্রবেশকারীরা যাতে ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে এ এলাকার তথ্য সংগ্রহে বিশেষ ফরমও ব্যবহার করা হয়। এ ফরমে ভোটারদের আদিনিবাস, পিতা, পিতামহের ঠিকানা, সম্পত্তি ও নিকটাত্মীয়দের পরিচয়ের তথ্য দিতে হবে। তথ্য সংগ্রহের পর বিশেষ কমিটি এসব ফরম যাচাই-বাছাই করে দেখে।”
গত বছর মার্চ থেকে দেশজুড়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলে।এ সময় প্রায় ৭০ লাখ ভোটার তালিকাভুক্ত হন।
আগামী নির্বাচনে প্রায় এক কোটি দশ লাখ নতুন ভোটার নিয়ে মোট ভোটার দাঁড়াবে প্রায় ৯ কোটি ২২ লাখের বেশি।