টেকনাফ নিউজ ডেস্ক… মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা যারা পরে বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছেন তারাই চট্টগ্রামে নিষিদ্ধ মাদক ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন।বাংলাদেশী রোহিঙ্গারা তাদের আত্মীয়তার সূত্রে মিয়ানমারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই দেশ থেকে ইয়াবা আমদানি করে। সেসব ইয়াবা টেকনাফ হয়ে আসে চট্টগ্রামে। এরপর সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানের বিক্রেতা ও সেবনকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।খবর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর।শনিবার গভীর রাতে নগরীর জুবিলী রোড থেকে প্রায় সাড় আট হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া ছয় মাদকবিক্রেতা র্যাবের কাছে এমন তথ্য দিয়েছেন বলে র্যাব সূত্রে জানা গেছে।এরা হলেন, ইয়াবা সম্রাজ্ঞী আনোয়ারা বেগম, তার ছেলে আজমল হক, আনোয়ারার দু’ভাই লিয়াকত ও মো. শফিক, আনোয়ারার নিকটাত্মীয় বেবি এবং প্রতিবেশী আবুল কাশেম। র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বাংলানিউজকে বলেন, “গ্রেফতার হওয়া ছয়জনের সবার পূর্বপুরুষ মায়ানমারের নাগরিক। তাদের কোনো আত্মীয়স্বজনও এদেশে নেই। তবে তারা এদেশে ভোটার হতে পেরেছেন বলে জানতে পেরেছি।”
র্যাব সূত্র জানায়, নগরীর জুবিলী রোডে বাসা নিয়ে কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবার ব্যবসা চালিয়ে আসছিল বলে তথ্য ছিল র্যাবের কাছে। এ অনুযায়ী পরিচয় গোপন করে র্যাব সোর্স ইয়াবা কেনার জন্য আনোয়ারার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সূত্র জানায়, ১২ লাখ টাকায় আনোয়ারার কাছ থেকে তিন হাজার পিস ইয়াবা কিনতে শনিবার রাত ১১টার দিকে জুবিলী রোডে আনোয়ারার বাসায় যান সোর্স। সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিলেন র্যাব সদস্যরা। ইয়াবা কেনাবেচার সময় র্যাব সদস্যরা ছয় জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেন। এসময় আনোয়ারার বাসায় তল্লাশি করে আট হাজার ৬৩০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব সদস্যরা।
রোববার দুপুরে র্যাব কার্যালয়ে গ্রেফতার হওয়া আনোয়ারা ইয়াবা ব্যবসার কথা অস্বীকার করেন। তার দাবি, তার বড় বোনের জামাই তাদের ফাঁসানোর জন্য ইয়াবাগুলো কার্টনে ভরে তাদের বাসায় রেখে যান। এরপর র্যাব তাদের বাসায় অভিযান চালায়।
প্রায় ৩৫ বছর বয়সী আনোয়ারা জানান, তার মা-বাবাসহ পূর্বপুরুষের জন্ম মায়ানমারে। তার জন্মের কয়েক বছর পর তারা মায়ানমার থেকে চট্টগ্রামে চলে আসেন। কিছুদিন টেকনাফ থাকার পর তারা চট্টগ্রাম শহরে এসে চকবাজারে বসবাস শুরু করেন। গত দশ বছর আগে তারা জুবিলী রোড এলাকায় বসবাস শুরু করেন।
আনোয়ারার দু’ছেলে ও চার মেয়ে আছে। তার স্বামী চীনে থাকে। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তার নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে আনোয়ারা জানান।
গ্রেফতার হওয়া আনোয়ারার প্রতিবেশি আবুল কাশেম বলেন, তার মা-বাবাও মায়ানমারে থাকতেন। তবে তার জন্ম হয়েছে পটিয়ায়। তার মা-বাবা মায়ানমার থেকে চট্টগ্রামে আসার পর প্রথমে পটিয়ায় থাকতেন। পরে তারা চট্টগ্রাম শহরে আসেন।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর রাকিবুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, “গ্রেফতার হওয়া আনোয়ারার পুরো পরিবার ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মায়ানমারে তাদের আত্মীয়স্বজন আছে। তাদের মাধ্যমে ইয়াবা এনে তারা চট্টগ্রামের খুচরা বিক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয়।”
তিনি বলেন, ‘মূলত রোহিঙ্গারাই চট্টগ্রামের ইয়াবা ব্যবসার বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। আর চট্টগ্রামে মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছেন কিছু ধনাঢ্য ব্যবসায়ী।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত জুন মাসে চট্টগ্রাম নগরীর আছাদগঞ্জ এলাকার একটি গুদাম থেকে প্রায় তিন লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র্যাব। এসময় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারের পর তারা জানিয়েছিলেন, মায়ানমার থেকে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা এনে তারা সেগুলো নগরীতে পাচার করে দেন।
সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র সূত্রে জানা গেছে, মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার সীমান্তপথ আছে। এর মধ্যে নাফ নদী দিয়ে ৫৪ কিলোমিটার সীমান্তপথ পড়েছে শুধু টেকনাফে।
মায়ানমার থেকে নাফ নদীতে টেকনাফে প্রবেশ পয়েন্ট আছে ২৪টি। এর মধ্যে নাজিরপাড়া, মনাখালীসহ ৬ থেকে ৭টি পয়েন্ট আছে যেগুলো দিয়ে সহজেই এবং অল্প সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করা যায়। আর এসব পয়েন্ট দিয়েই ইয়াবা এসে তা নগরীতে আসছে বলে র্যাব কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য আছে।
মেজর রাকিবুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, “মাছের কার্টনে, সবজির টুকরিতে, কলার তোড়ের বেতর করে ইয়াবা চট্টগ্রাম নগরীতে আনা হয়। সন্দেহ করে এগুলো আটক করাও কঠিন।”
বিজিবি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১১ সালে বিজিবি টেকনাফ সীমান্তপথে আসা এক লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৮২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৯৩ পিস ইয়াবা।
জুনে মায়ানমারে জাতিগত সংঘাতের পর সীমান্তপথ দিয়ে কিছুদিন ইয়াবা আসার পরিমাণ কমলেও সামপ্রতিক সময়ে তা আবারও বেড়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব সূত্র।
Leave a Reply