পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর প্রকল্পে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ১০ মাসের টানাপড়েন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সোমবার মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি সর্বশেষ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পদত্যাগী এই মন্ত্রীর আগের দায়িত্ব- যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বকালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার অর্থ দেয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতির তদন্তে বাংলাদেশ সরকার দরকারি সহযোগিতা করছে না জানিয়ে গত জুন মাসে ঋণচুক্তি বাতিল করে প্রতিষ্ঠানটি।
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার সময়য় সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। পরে তাকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
বিশ্বব্যাংকের পরে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরাও এ প্রকল্পে ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সেতু প্রকল্পটি।
এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা ‘নিজস্ব অর্থায়নে’ সেতুটি নির্মাণ করা হবে বলে বক্তৃতা বিবৃতি দিতে থাকলে ঋণচুক্তি বাতিলের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
সর্বশেষ রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পদ্মা সেতুর ঋণ পেতে শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের চারটি প্রস্তাবই মেনে নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ সংগ্রহের জন্য সরকার এখনো বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১২০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
রোববার অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘চার প্রস্তাবের মধ্যে চতুর্থটি মেনে নেয়ায় একটু অসুবিধা ছিল। আমরা চেষ্টা করছি, এটাও কীভাবে সমাধান করা যায়।’’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘তা-ই যদি হয়ে যায়, তাহলে শিগগিরই আমরা শুরু করতে পারি।’’
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের চতুর্থ শর্তটি ছিল তদন্ত চলাকালে সরকারি দায়িত্ব পালন থেকে সরকারি ব্যক্তি- আমলা ও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের পদত্যাগ।
সোমবার সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেন। এর আগে দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও যাননি তিনি। এ বিষয়ে দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, অনুপস্থিতির বিষয়ে আবুল হোসেন তাদের কিছু জানাননি। মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত হতে না পারলে আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানানোর প্রথা রয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে বার্তাসংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, সৈয়দ আবুল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার ‘পরামর্শ’ দেয়ার পর সোমবারের মন্ত্রিসভার নির্ধারিত বৈঠকে তিনি যোগ দেননি তিনি।
তবে পদত্যাগপত্র জমা দিলেও ‘দফতরবিহীন মন্ত্রী’ হিসেবে থাকার আশা ছাড়েননি সৈয়দ আবুল হোসেন। বিকেলে একটি সংবাদপত্রের সঙ্গে আলাপে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকছেন, নাকি মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে দৈনিক প্রথম আলো’র অনলাইন সংস্করণকে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, ‘‘আমি মন্ত্রী থাকব কি না, সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছে। আর দফতরবিহীন মন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
Leave a Reply