ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার (টেকনাফ নিউজ ডটকম)-
রামু তান্ডবের নৃশংস ঘটনায় আমার স্বামী কোন অবস্থায় জড়িত ছিল না। বিনাকারণে তাকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। দিবালোকের মত স্পষ্ট বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিক, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সকলের জানা থাকলেও ষড়যন্ত্রকারী কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় রামু থানা পুলিশ অনর্থক তাকে জুলুম করেছে। ফলে বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক নির্দোষ স্বামীর মুক্তির দাবিতে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন কারান্তরীন আরটিভির কক্সবাজার প্রতিনিধি এস.এম জাফরের স্ত্রী আছমা উল নাজমা।
রবিবার সকালে প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কারান্তরীন এই সাংবাদিকের স্ত্রী স্বামীর অনুপস্থিতিতে অবুঝ দু’টি সন্তান নিয়ে নিজের মানবেতর জীবন যাপনের করুণ বাস্তবতা তুলে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় তিনি অন্তত মানুষ হিসেবে ঘটে যাওয়া ষড়যন্ত্রের প্রতিকার পেতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, ঘটনার দিন ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে একজন টিভি সাংবাদিক হিসেবে সারাক্ষণ তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশ, মাটি ও মানুষের স্বার্থে ঘটনার সঠিক চিত্র পৃথিবীবাসিকে তিনি দেখিয়েছেন।
কিন্তু দূর্ভাগ্য ঘটনায় জড়িত রাজনৈতিক পরিচয়ী গুটিকয়েক দুর্বৃত্ত এস.এম জাফরের সেই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা মানতে পারেননি। ফলে তারা নাশকতার ঘটনায় নিজেরাই ফেঁসে যাওয়ার আগে গভীর ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসিয়ে দেয়। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, স্থানীয় পুলিশ, কোন প্রকার যাচাই-বাছাই না করে ষড়যন্ত্রকারীদের কথা মত তাকে ১৩ অক্টোবর রাতে জিজ্ঞাসাবাদের অজুহাতে থানায় নিয়ে যান। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ নাটকীয়তা শেষে পুলিশ সাংবাদিক জাফরকে বৌদ্ধ সহিংসতার একটি নিয়মিত মামলায় জড়িয়ে আদালতে প্রেরণ করে। অথচ সাংবাদিক জাফর বৌদ্ধ সহিংসতার মত বর্বরোচিত এই ঘটনায় দায়েরকৃত কোন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নয়।
তবুও বিনাকারণে দীর্ঘ দুইমাসেরও কাছাকাছি নিরপরাধ স্বামীকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্টে আটকিয়ে রাখার বেদনা সইতে না পেরে শেষ পর্যন্ত প্রেস ক্লাবে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করা দু’সন্তানের জননী আছমা উল নাজমা লিখিত বক্তব্যে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করে ‘এই জুলুমের বিরুদ্ধে সামরিক বেসামরিক উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।’ তিনি বলেন আমার নিরপরাধ স্বামীকে জেলে আটকিয়ে রেখে প্রশাসন মানবাধিকার শুধু লঙ্ঘন নয়, দেশের ন্যায় বিচারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এতে করে দেশনেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে দারুণভাবে। কাজেই যেই মামলায় সাংবাদিক জাফর এখন জেল খাটছে, সেই মামলা কিংবা বৌদ্ধ সহিংসতার ঘটনায় আদৌ তিনি জড়িত ছিলেন কিনা? তা নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখতে তিনি প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাফর পরিবারের সদস্যরা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে জাফরের সাথে কোন সংখ্যালুঘু অথবা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাথে ন্যূনতম বিরোধ নেই, বরং রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাথে ছিল সাংবাদিক জাফরের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক।
এদিকে রামু কেন্দ্রীয় সীমা বৌদ্ধ বিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানিয়েছেন, সাংবাদিক এসএম জাফর সবসময় তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন এবং তিনি রামু সহিংসতার মতো ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন না। কারণ তার সাথে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধুর স¤পর্ক রয়েছে। ফলে প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুও বিনাদোষে জাফরের জেল খাটার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই ঘটনায় কোন্ ষড়যন্ত্রকারী পেছন থেকে পুলিশকে অপব্যবহার করে দেশের চলমান আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, সেই ষড়যন্ত্রকারীর শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি আরো বলেন, অন্যথায় নির্দোষ জাফরের মুক্তির দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনে তার পরিবারের পাশাপাশি রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও অবস্থান নেবে।
Leave a Reply