হুমায়ুন রশিদ,টেকনাফ।
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের আর্ন্তজাতিক সীমারেখা নাফনদীতে কাঁকড়া শিকাররত অবস্থায় বাংলাদেশী জেলেকে গুলিবর্ষণ করে নদীতে নিখোঁজ থাকার ৭দিনের মাথায় বাংলাদেশী ১জেলে ও বিজিবির সহায়তায় উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর বিকালে লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য প্রেরণ করেছেন। বিজিবির জোরালো প্রতিবাদ লিপি ও পতাকা বৈঠক করে সুবিচার দাবী।
সুত্রে জানাযায়-১৫জানুয়ারী সকাল সাড়ে ৭টারদিকে টেকনাফের হ্নীলা সুলিশ পাড়া এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের পুত্র নুরুল কবির প্রকাশ মিয়া মাছ শিকারের সময় জইল্ল্যা দিয়া দ্বীপ এলাকার পূর্বপাশে কাঁদার ভেতর ডুবন্ত লাশ দেখতে পেয়ে আতœীয়-স্বজন ও বিজিবিকে খবর দেয়। দমদমিয়া বিওপির কোম্পানী কমান্ডার জজ মিয়া ও নিহতের আতœীয়-স্বজন লাশ উদ্ধার করে হ্নীলা বিওপিতে নিয়ে আসে। এরপর থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হলে এস আই রতœশ্বর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর করে। লাশের মাথায় বুলেটবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। এরপর বিকাল আড়াইটার দিকে লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য গত ৯ জানুয়ারী বিকাল ৩টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের গুদাম পাড়া এলাকার মোহাম্মদ হোছন প্রকাশ মাইন্যার ছেলে মোঃ ফারুক-(১৮) ও ছৈয়দ আলমের পুত্র ইসমাইল ক্যাংব্রাং এলাকায় নাসাকার পাস (সাপ্তাহিক চুক্তি) নিয়ে কাকঁড়া শিকারে যায় নদীতে। কাঁকড়া শিকাররত অবস্থায় হ্নীলা চৌধূরী পাড়ার জনৈক রাখাইনের বিয়ে বাড়িতে মিয়ানমারের ৪/৫জন মহিলা আসার সময় নাফনদীর দ্বীপ হতে কতিপয় জলদস্যু উক্ত মহিলাদের ধাওয়া করার চেষ্টা চালায়। চৌধূরী পাড়া এলাকার রাখাইনেরা খবর পেয়ে ওপারের ক্যাংব্রাং ক্যাম্পের নাসাকা বাহিনীকে খবর দিয়ে টহলে বের করে। এরপর নাসাকা বাহিনী কাউকে না পেয়ে কাঁদায় নেমে কাঁকড়া শিকাররত জেলেদের খুব কাছ থেকে গুলিবর্ষণ করে। এতে জেলে ফারুক ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নৌকা হতে নদীতে ডুবে গেলেও অপর সঙ্গী ইসমাইল পাশ্ববর্তী নৌকার সহায়তায় কিনারায় ফিরে এসে স্থানীয় বিজিবিকে বিষয়টি জানায়। এরই সূত্রধরে গত ১০জানুয়ারী সকাল সাড়ে ১০টারদিকে টেকনাফ ৪২বিজিবির অপারেশন অফিসার-রাকিবুল,কোম্পানী কমান্ডার সিরাজুল ইসলামসহ বিজিবির একটি দল নাগাপুরা ক্যাম্পে পতাকা বৈঠক করে গুলিবর্ষনের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। কিন্তু নাসাকা বাহিনী তা অস্বীকার করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়ে ভাব বজায় রাখেন।
গত ১১ জানুয়ারী শুক্রবার রাতে মিয়ামারের নাফপুরাস্থ ক্যাংব্রাং এলাকার জনৈক লিয়াকত আলীর প্যারাবনের গোলপাতা বনে বাংলাদেশী জেলে ফারুকের পরিত্যক্ত লাশ পাওয়ার খবর স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু নাসাকা বাহিনী সীমান্তে নিজেদের অপকর্ম ঢাকা দেওয়ার জন্য লোকজনকে ভীতি প্রদর্শন করায় কেউ মুখ কুলেনি। এই লাশকে রাতের আধাঁরে লিয়াকতের খাল,-লুদাইংয়েরখালে-রাইম্যাঘোনাসহ ৩জায়গায় স্থানান্তরের পর নিরুপায় হয়ে রাইম্যাঘোনার রাখাইন পল্লীর চিতার পাশের গোলপাতা বনস্থ প্রজেক্টের চড়ায় পূঁেত ফেলা হয়। পরদিন নিহতের পরিবার গোপন সুত্রে নিশ্চিত হয়ে সংবাদকর্মীদের জানায়-ভোররাত দেড়টার দিকে বুমের নির্দেশে ৪/৫জন নাসাকা সদস্যের উপস্থিতিতে ৮/১০জন রাখাইনদের সহায়তায় রাইম্যাঘোনার রাখাইন পল্লীর গোলপাতা বনের চিতার পাশে একটি প্রজেক্টের মাঝখানে চড়াভূমিতে গর্ত করে বাংলাদেশী জেলে ফারুকের লাশ পূঁেত ফেলা হয়। এই স্থানে লোকজনের আনা-গোনা নিষিদ্ধ করা হয়।। দূরবর্তী স্থানে নাসাকার বিশেষ টহল বলবত থাকে। এ সংবাদ বাংলাদেশে প্রকাশ হওয়ার ফলে গোপন সংবাদে নাসাকা বিপাকে পড়ে যায়। তাই কৌশলে রাতের আঁধারে লাশটি নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে আশংকা করছে লোকজন। টেকনাফ ৪২বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল জাহিদ হাসান বলেন- লাশটি যেহেতু বাংলাদেশ জলসীমানায় পাওয়া গেছে তাই প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়ে তীব্র নিন্দা জানানো হবে। পরবর্তীতে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এর সুবিচার চাওয়া হবে।
তবে নিহতের পরিবার দাবী করছেন- এ খবর বাংলাদেশে সরবরাহের সন্দেহে ১ যুবককে বেধড়ক প্রহার করা হয়েছে। তাই কৌশলে লাশটি নদীতে ফেলে দিয়েছে। তবে লাশটি ফিরে পাওয়ায় পরিবারের লোকজন স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছেন। ১৬ জানুয়ারী পোস্টমর্টেম শেষে লাশ আনা হলে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হবে। #################