ফাতেমা-তুজ-জোহরাবরফে ঢাকা …বিশাল আল্পস পর্বত। এর বড় বড় পর্বতশৃঙ্গের পায়ের কাছেই ঘুমিয়ে আছে উপত্যকাটি। সেটার কোলজুড়ে ছোট্ট একটি গ্রাম ‘ভিগানেলা’। ইতালির প্রত্যন্ত এই গ্রামটিতে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন পর্যন্ত পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে পেঁৗছতে পারে না সূর্যের আলো। কারণ, শীতকালের এই সময়টায় সূর্যের তীব্রতা থাকে খুব কম। ফলে গ্রামবাসীদের দিন কাটাতে হয় অন্ধকারে। ২ ফেব্রুয়ারি সূর্যের আলোর ছোঁয়া পেয়েই জার্মান বৌদ্ধ অধ্যুষিত গ্রামবাসীরা পালন করেন আনন্দোৎসব। তবে বছর ছয়েক আগে সব কষ্টের অবসান ঘটিয়ে গ্রামকে আলোর মুখ দেখানোর জন্য তাঁরা সবাই মিলে শুরু করেন অন্য ধরনের একটি কাজ। এই উদ্যোগটির মূল নায়ক সূর্যঘড়ির নকশাবিদ ও স্থপতি গিয়াকোমো বেনজানি। এক লাখ ইউরো বাজেট নিয়ে যখন সূর্যালোক প্রতিফলনের প্রস্তাবটি দিলেন, পাগল ভেবে তাঁকে গালমন্দ করতেও ছাড়লেন না কেউ কেউ। ‘কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম। বিজ্ঞান তথা পদার্থবিজ্ঞানের ওপর আমার যথেষ্ট বিশ্বাস রয়েছে’_এভাবেই নিজে কী ভেবেছিলেন, তা জানালেন নকশাবিদ। তবে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি মেনে নিল গ্রামবাসী। মেয়র পিয়ের ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে জোগাড় করা হলো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। বরাদ্দ করা হলো অর্থ। আর কাজের শুরুতেই জোগাড় করা হলো ছোট ছোট হাজার হাজার কাচের টুকরো। সেগুলো টালির মতো করে সাজিয়ে, শক্তিশালী আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে বানানো হলো ৪০ বর্গমিটারের বিশাল আয়নাটি। প্রস্থে এটি ৮ মিটার, দৈর্ঘ্যে ৫ মিটার। সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে গ্রামে ফেলার জন্য আয়না বসানো হলো মাটির ৮৭০ মিটার ওপরে পাহাড়ের ঢালুতে। যুক্ত করা হলো কম্পিউটার প্রোগ্রামের সঙ্গে, যাতে সূর্যমুখী ফুলের মতো প্রয়োজনে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করতে পারে টালিগুলো। এখন প্রতিবছর বহু দর্শনার্থী ভ্রমণ করছেন গ্রামটি। ঘুরে দেখছেন আয়নাটি। আল্পসের ফাঁক দিয়ে আলো সংগ্রহ করা আয়নাটিকে নিয়ে বানানো হয়েছে একটি প্রামাণ্যচিত্র; নাম_ ‘দ্য মিরর’
Leave a Reply