নিজস্ব প্রতিবেদক……তুচ্ছ ঘটনায় লংকাকান্ড হয়েছে কক্সবাজার শহরতলির উত্তর নুনিয়াছড়ায়। দুইপক্ষের সংঘর্ষে আধাঘন্টা ধরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা। এতে মহিলা ও শিশুসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৮ জনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের মুহুর্ত কয়েক আগে এই ঘটনা ঘটে।
ওই সময় মধ্যম নুনিয়াছড়া থেকে আসা একদল সশস্ত্র যুবক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া উত্তর নুনিয়াছড়া এলাকায় অপর পক্ষের বেশ কয়েকটি বসতবাড়িতে হামলা চালায়। তারা ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য বাঁধ নির্মাণে টাকা চাইতে গিয়েই এই ঘটনার সূত্রপাত।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে আছেন হোছাইন আহমদ বাহাদুর (২৮), অলিম উদ্দিন (২৬), জুয়েল (২০), মোজাম্মেল হকের স্ত্রী আছিয়া বেগম (৩০), ফরিদুল আলমের মেয়ে ময়না বেগম (১৩), মৃত আমির হামজার স্ত্রী গোলতাজ বেগম (৭০), মুফিজুর রহমানের স্ত্রী রশিদা বেগম (৪০), কবির আহমদ (৩৫) ও তার ভাই আখতার হোসেন (৩০), মোহাম্মদ ফারুক (২৫), মনির উদ্দিন (২৮), ইমরান (২০), সিরাজুল হক (৩৫) ও হারুন (২৮)। এদের মধ্যে জুয়েল, ময়না বেমম ছুরিকাহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৮ জনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েকদিনের টানাবর্ষণে উত্তর নুনিয়াছড়া গ্রামের ‘বিল এলাকা’য় পানি জমে অধিকাংশ বসতবাড়িই পানিবন্দি হয়ে পড়ে। কয়েকজন এলাকাবাসি উদ্যোগি হয়ে ‘মাঠের ঝোরা’ এলাকায় আইল (বাঁধ) কেটে দিলে ওই পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পায় বিলে বসবাসকারি এলাকাবাসি। কিন্তু কেটে দেয়া আইলটি (বাঁধ) আবার মজবুত ভাবে সংস্কার করার জন্য ওই এলাকার প্রতিটি ঘর থেকে ৫০০ টাকা হারে চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। সবাই ওই টাকা দিতে রাজি হলেও কবির আহমদ নামের এক ব্যক্তি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সূত্র মতে, কবির আহমদ প্রথমে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বৃহস্পতিবার রাতে তার কাছে টাকার জন্য গেলে এনামুল হক নামের এক এলাকাবাসির সাথে তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে হোছাইন আহমদ বাহাদুর নামের আরেক এলাকাবাসি বিষয়টি জানার পর এনামুল হকের অনুরোধে তিনি কবির আহমদের কাছে টাকার জন্য যান। ওই কবির আহমদ টাকা না দিয়ে উল্টো খারাপ ব্যবহার করলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও পরে তা মারপিট পর্যন্ত গড়ায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই ঘটনার পর হোছাইন আহমদ বাহাদুর মধ্যম নুনিয়াছড়া ফিসারি ঘাট এলাকার তার বন্ধুদের খবর দিলে কয়েকজন ঘটনাস্থলে আসেন। ওই সময় কবির আহমদের শ্বশুর বাড়ির লোকজনও ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মধ্যম নুনিয়াছড়া থেকে আসা যুবকদের উপর হামলা হয়েছে এমন গুজবে ওই এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক যুবক কিশোর সশস্ত্র অবস্থায় উত্তর নুনিয়াছড়ায় ঘটনাস্থলে আসে। তখন দুপুর সাড়ে ১২টা।
তারা জানান, এ সময় কবির আহমদের শ্বশুরবাড়ির নিকটাত্মীয়দের সাথে মধ্যম নুনিয়াছড়ার যুবকদের সংঘর্ষ লেগে যায়। দীর্ঘ প্রায় আধাঘন্টা ধরে এই সংঘর্ষ চলে। এ সময় ব্যাপক হারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুরো এলাকা ‘রণক্ষেত্রে’ পরিণত হয়।
সূত্র জানায়, সংঘর্ষের সময় কয়েকজন ছুরিকাহত হন। আহতদের অধিকাংশই ইটপাটকেলের আঘাতে রক্তাক্ত জখম হয়েছেন।
উত্তর নুনিয়াছড়া মসজিদে আল-খিজিরের খতিব মাওলানা সিরাজুল ইসলাম জানান, হামলাকারিরা তার ও নিকটাত্মীয়দের ঘরবাড়িতে হামলা চালায়। ওই সময় ব্যাপক হারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং মহিলা ও শিশুদের মারধর করে।
তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হোছাইন আহমদ বাহাদুর দাবি করেন, কবির আহমদের শ্বশুর পক্ষের নিকটাত্মীয় মোজাম্মেল হকের কারণেই ঘটনা বিরাট আকার নিয়েছে। তিনি উস্কানি না দিলে ঘটনা এতো বেশি হতো না।
তার দাবি, তিনি নিজে আক্রান্ত হওয়ার পর ঘটনা নিষ্পত্তি করতেই চেয়েছিলেন।
কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান জানান, দুইপক্ষের এজাহার পাওয়া গেছে। তবে এখনো কোন মামলা হয়নি।
কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, ‘এলাকাবাসির ঘটনাটি বৈঠকের মাধ্যমে মিমাংসা করা হবে। আগামিকাল (আজ) শনিবার বেলা ১২টায় বৈঠকের সময় দেয়া হয়েছে।’
Leave a Reply