মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার এক বছর অতিবাহিত হলেও মিয়ানমারের আকিয়াব বর্ডার পাস বন্ধ থাকায় (বাংলাদেশ-মিয়ানমার) সীমান্ত বাণিজ্য ধ্বসের মুখে পড়েছে। এতে সরকার এনবিআর কর্তৃক নির্ধারিত রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর (সিটওয়ে) পর্যন্ত বর্ডার পাস দীর্ঘ ১ বছর ধরে বন্ধ থাকায় যাতায়াত করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা পছন্দনীয় পণ্য সামগ্রী আমদানি করতে পারছে না। অন্যদিকে, মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা সাত দিনের বর্ডার পাস নিয়ে এসে দেশের প্রত্যক অঞ্চলে যাতায়াত করছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি ২০১২-১৩ অর্থ বছরে টেকনাফ স্থলবন্দরের মাসিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় ৫ কোটি ৪১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এ স্থলবন্দরে প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা, আগস্টে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, অক্টোবরে ৪ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, নভেম্বরে ৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ডিসেম্বরে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা, জানুয়ারীতে ৫ কোটি ২১ লাখ, ফেব্রুয়ারীতে ৫ কোটি ২৯ লাখ, মার্চে ৫ কোটি ৪১ লাখ, এপ্রিলে ৪ কোটি ৫ লাখ ও মে মাসে ৪ কোটি ৪ লক্ষ ৩৮৫ টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এতে এ পর্যন্ত সীমান্ত বাণিজ্যে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৫ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৫ টাকা।
স্থলবন্দরের অভিবাসন কেন্দ্রের ইনচার্জ তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, সীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ-মিয়ানমারের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের দেখাশুনা ও ব্যবসায়ীক কার্যক্রমের জন্য ৭ দিনের বর্ডার পাস (১৯৯৫ সালে) ও একদিনের ট্রানজিট (১৯৮০ সালে) চালু করা হয়েছিল। এতে করে সরকার ৭ দিনের বর্ডার পাস বাবদ ৫০০ টাকা ও একদিনের ট্রানজিটের ভ্রমন কর বাবদ ৩০ টাকা করে রাজস্ব পেত। মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গার কারণে হঠাৎ করে সে দেশের সরকার অঘোষিতভাবে ট্রানজিট পাস দুটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়। মিয়ানমার সরকার প্রায় সাড়ে পাচঁ মাস পরে সীমান্ত বানিজ্য ব্যবসায়ীদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। কিন্তু ৭ দিনের অনুমতিরস্থলে অঘোষিতভাবে তা কমিয়ে ৩ দিনে নিয়ে আসে এবং আকিয়াব (সিটওয়ে) যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এছাড়া গত ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে এই অভিবাসন কেন্দ্র থেকে ২২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। কিন্তু চলতি অর্থ বছরে তা কমে ১০ লক্ষ ৯৬ হাজার ৩’শ টাকায় চলে এসেছে।
তিনি আরো জানান, গত ১ বছর ধরে আকিয়াব যাতায়াত সুবিধা চালুর বিষয়ে বার বার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে পত্র প্রেরণ করা হলেও তাঁরা কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। দাঙ্গার পর থেকে দু’ দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে চলতি মাসের এ বৈঠক অনুষ্টিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে এ বিষয়ে জোরালো ভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ৭দিনের পরিবর্তে পাচঁশত টাকার ভ্রমণ কর দিয়ে মিয়ানমার গেলেও সেদেশের সরকার ৩ দিনে নিয়ে আসে। এতে আকিয়াব যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় স্বল্প সময়ে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা ৭ দিনের অনুমতি নিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ সারাদেশে অবাধ বিচরণ করছে। টেকনাফ সীমান্ত বানিজ্য প্রসারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
টেকনাফ স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনে সহ-সম্পাদক হাজী সাইফুল করিম বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার পাস চালু হলেও আকিয়াব যেতে না পারার কারণে এক প্রকার অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে ব্যবসা-বানিজ্য চালিয়ে যেতে হচ্ছে। চলতি মাসের কয়েকদিনের মধ্যে উভয় দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের মাধ্যমে এ সমস্যা সমধান করা হলে সীমান্ত বানিজ্যে গতি ফিরে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে টেকনাফ স্থল বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, মিয়ানমার থেকে কিছু পরিমান কাঠ ও মাছ আমদানি হওয়াই বন্দর সচল রয়েছে। অন্যান্য পণ্য সামগ্রী আমদানি অনেক কমে যাওযাই আশানুরূপ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সীমান্ত বানিজ্য গতিশীল করতে আমদানী-রপ্তানী কারক প্রতিষ্টান ও ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আশার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। – See more at: http://dainandincox.com/archives/24962#sthash.LCp8fi0a.dpuf