শামসুল আলম শারেক, টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বাস্তবায়নাধীন কর্মসূচী ও প্রকল্প সমূহ গুটিয়ে নিচ্ছে এনজিও সংস্থা মুসলিম এইড। এতে এতদ্বাঞ্চলে বসবাসরত প্রায় আড়াই লক্ষাধিক দরিদ্র ও বিপদাপন্নজনগোষ্ঠীর মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। সংশ্লিষ্ট সূত্র ও খোঁজ-খবর নিয়ে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সরকারী সিদ্ধান্তের কারণে মুসলিম এইড তাদের সকল কার্যক্রম প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গতকাল ৩১ জুলাই এ খবর টেকনাফের হ্নীলা লেদা এলাকায় অবস্থিত মুসলিম এইড হাসপাতালে পৌঁছলে কর্মরত কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মাঝে বিমূঢ়ভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে তাদের সবচেয়ে বেশী হতাশা প্রকাশ করেছে হাসপাতালে আগত রোগীরা। হ্নীলার অজপাড়া গাঁ লেদা এলাকার পাহাড়েরর পাদদেশে অবস্থিত মুসলিম এইড হাসপাতাল বিশেষত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য গড়ে তোলা হলেও উন্নত সেবা, মান সম্পন্ন চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণের কারণে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে স্থানীয় গ্রাম-পল্লীর অসহায় লোকজন। গতকাল দুপুর ১টার দিকে ওই হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় গ্রামের প্রসুতি মোমেনা খাতুন দু’জমজ সন্তান নিয়ে, শিশু মোঃ তারেক তার বাম পায়ের ফ্যাঙ্গাস নিয়ে ও হাসু মিয়া তাদের বুকের ব্যাথা নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়াও সকাল ৯টা থেকে শরণার্থীদের চেয়ে বেশী স্থানীয় রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে মুসলিম এইড বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে উখিয়া-টেকনাফে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার পরিবারের ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৬ জন দরিদ্র ও বিপদাপন্ন মানুষ মুসলিম এইডের স্বাস্থ্য, কারিগরি শিক্ষা, চিকিৎসা, অনানুষ্ঠিানিক শিক্ষা ক্ষুদ্র ঋণ, স্কুলগামী শিশুদের দুপুরের খাবার, জরুরী ত্রাণ ও সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানাবিদ সহায়তা পেয়ে আসছে। সূত্র জানায়, আগামী ১৪ আগষ্ট মুসলিম এইড এ অঞ্চল থেকে তাদের পুরো কার্যক্রম গুটিয়ে নেবে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, মুসলিম এইড তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিলে স্থানীয় ৪ শতাধিক কর্মজীবি কর্মহীন হয়ে পড়বে। এছাড়া অনানুষ্ঠানিক ও কারিগরি শিক্ষা এবং জীবিকায়ন কর্মসূচী থেকে স্থানীয় ১০ হাজার জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হবে। ১৮২০ জন ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। অপরদিকে করিগরি ও দক্ষতা উন্নয়ন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ৫০ হাজার জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হয়ে অর্থনৈতিক দূরাবস্থায় পতিত হবে। ৭৬ হাজার ৩০ জন স্কুলগামী শিশুরা পুষ্টিহীন হয়ে ঝড়ে পড়বে। এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়ে এ অঞ্চলের নারীদের অর্থনৈতিক বিপদাপন্নতা বৃদ্ধি পাবে। প্রায় ১ লাখ জনগোষ্ঠী স্বাস্থ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। ২ হাজার প্রতিবন্ধিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে ১২শ’ পুষ্টিহীন শিশুর পুষ্টি কার্যক্রম, ৩ হাজার গর্ভবতী মায়ের জন্য গর্ভকালীন স্বাস্থ্য সেবা, মাসে ৩০ নারী জেন্ডার সহিংসতা জনিত কাউন্সিলিং বঞ্চিত এবং ২৫ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য স্থাপিত বিশুদ্ধ পানি ও পয়: নিস্কাষণ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
এলাকার জনসাধারণ এনজিও সংস্থা মুসলিম এইডের বিরুদ্ধে সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত পূর্ণবিবেচনা করে বাস্তবায়নাধীন কর্মসূচী সমূহ বহাল রেখে এদ্বাঞ্চলের মানুষকে মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট সরকারের এনজিও ব্যুারোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
###########################
শামসুল আলম শারেক,
টেকনাফ ॥
মোবাইল নং-০১৮১৪-৪৭৬৩৩৪
Leave a Reply