রমজান উদ্দিন পটল…টেকনাফের দুর্গম এলাকা হোয়াইক্যংয়ের হিন্দু পাড়া নামে পরিচিত বৌদ্ধ পল্লীর চর্তুপাশে মুসলিম লোকজনের বাড়ীঘর। জোয়ারী খোলা নামক এই গ্রামে মুসলিমদের সংখ্যা তুলনামুলক বহু গুন বেশি। এ গ্রামে মোঠ ৪৬ টি সংখ্যালঘু পরিবার রয়েছে। তৎমধ্যে ১৪টি বড়–য়া ৩২টি হিন্দু পরিবার। পশ্চিমে ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মুসলিমদের বসতি এলাকা পেরিয়ে গহীন পাহাড়ী এলাকা খরিখোলা, লম্বাঘোনা, মনখালী, পুতিবনিয়ায় রয়েছে কিছু সংখ্যক আধিবাসীদের বসতি। হোয়াইক্যংয়ের উক্ত এলাকাজুড়ে মুসলিম-বৌদ্ধ হিন্দু বড়–য়া জনগোষ্টির সহাবস্থান রয়েছে। রয়েছে ঐয্যিময় সম্প্রীতি। এমতাস্থায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ে তকবীর শ্লোগান দিয়ে উগ্রপন্থীরা (হিন্দু-বড়–য়) পল্লীতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে ভস্মিভুত হয় ৩ বাড়ী। অর্ধপুড়া ৪ বাড়ীসহ ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১৭ পরিবার। হামলায় দুস্কৃতকারীদের ভয়াবহতা হতে প্রানে রক্ষা পাওয়া হতদরিদ্র প্রতিবন্ধি বৃদ্ধ মিলন রোদ্র (৮১) ঘটনার করুন বর্ননা দিতে গিয়ে বলেন-এলাকায় মুসলিমদের সাথে সখ্যালঘুদের সম্প্রীতি রয়েছে। এখনো উভয়ের মধ্যে সামাজিক সু-সম্পর্ক বিরাজমান। তবে ওরা কারা ! মসলিমদের ধর্মীয় অযুহাতে নারায়ে তকবীর শ্লোগান দিয়ে স্বরণকালের এ অমানবিক কান্ড ঘটাল।ওরা কেন আমার ঘরে আগুন দিল । গত ৭ অক্টোবর দুপুরে সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে সর্বস্ব হারিয়ে আসহায় হতদরিদ্র বৃদ্ধ মিলন রোদ্র ও তার সহর্ধমিনী প্রভা রোদ্র ঘটনার করুন বর্ণনা দেন।
প্রতিবন্ধি অসহায় বৃদ্ধ মিলন রোদ্র একজন পেশাগত শ্রমিক। টেকনাফের হ্নীলা রোজার ঘোনা এলাকায় তাদের পৈত্রিক ভিটাবাড়ী। ১৩ বছর পুর্বে জুর- জুলুম নির্যাতনের মুখে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে হোয়াইক্যংয়ের হিন্দু পল্লীর জনৈক সাধন মল্লিকের বড়ীতে আশ্রয় নেয়। সংসারে তার ২ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন সে বার্ধক্য জনিত রোগে ভোগছেন। ৩ বছর পুর্বে নিজের দু হাত ও এক পা অবস হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে। ঘর থেকে অন্য কারো সহায়তা ছাড়া বেরুবার শক্তি তার নেই। ৩০ সেপ্টেম্বর ৭টায় হোয়াইক্যং বাস ষ্টেশন হয়ে তাদের পল্লীর দিকে দা-লাঠি অস্ত্র হাতে দু হাজারেরও বেশী দস্কৃতকারী হামলা চালাবে তা ঐ পল্লীর কারো কল্পনা ছিলনা। প্রতিবন্ধি বৃদ্ধ ঘরের ফাটা মাদুরায় শুয়া। স্ত্রী ও ৮ বছরের ছোট মেয়েটি পাশের বাড়ীতে পুজাঁর প্রস্তুতি দেখতেন যায়। এমন সময়ে অসহায় বৃদ্ধ শুনতে পায় নারায়ে তকবীর শ্লোগানে মুখর এক জঙ্গী মিছিল। শুধু তা-নয় ঐ মিছিল থেকে শুনে কাফেরদের অস্তানা জালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও শ্লোগানের আওয়াজ । এতে বিস্মিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন তিনি। পাশের ঘর থেকে স্ত্রী প্রভা ছোট মেয়েকে নিয়ে দৌড়ে ছুটে এসে তার পাশে বসে অসহায়বোধ করেন। পরপর শুনতে পায় পল্লীতে হাও মাও ছিৎকার –ছুটাছুটি ও গুলির বিকট শব্দ। এতক্ষণে এলাকার পাশবর্তী বাড়ী ঘরের সকল নারী পুরুষ পালাতে লাগল। ভয়ে থর থর কাপছে প্রতিবন্ধি বৃদ্ধ ও তার স্ত্রী সন্তান। পুলিশ উপর্যুপরী গুলি বর্ষণ করে হামলাকারীদের বাঁধা দেয়। এসময় ব্যাপক সংর্ঘষ বাঁধলে এলাকা জুড়ে কম্পন ধরে। অতংকে অসহায় বৃদ্ধ ছোট মেয়েটিকে নিয়ে নিরাপদে চলে যেতে স্ত্রীকে অনুরোধ করেন। পঙ্গু-মাজুর ও দরিদ্র বিধায় তার উপর কোন হামলা করবেনা এমন বর্ষা প্রতিবন্ধি বৃদ্ধ’র মনে । তার পরও অস্থির মনে বড়ীর আধাঁরে বসে ভয়ে কাপতে লাগল তিনি। পরক্ষণে জালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও শ্লোগানে একটি লাঠিয়াল বাহিনী এসে হামলে পড়ে বাড়ীর ছাউনি ও দেওয়াল ভাঙ্গার এক পর্যায়ে ঘরে দুস্কৃতকারীরা পেট্রোল দিয়ে অগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনের তাপ ও প্রচন্ড ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে বাড়ীতে আটকে পড়েন তিনি। বের হয়ে নিরাপদে যাওয়ার শক্তি নেই তার। এমন অবস্থান কঠিন অসহায় বোধ করে প্রাণে বাঁচার ভরসা হারিয়ে ফেলেন। এ কঠিন মুহুর্তে তার মনে প্রশ্ন জাগে -কেন ওরা আমার ঘরে আগুন লাগাল। মুসলিমদের সাথে সামাজিক সম্প্রীতি রয়েছে, নেই কোন বৈষম্য। কেনইবা ওরা হামলা নির্যাতন চালায় ? কোন অপরাধ ছাড়া আগুনে পুড়ে মরবে,এমন চিন্তায় কেঁদে ভেঙ্গে পড়েন। নিজে নিজে ধরে নিলেন নিশ্চিত আগুনে তার মৃত্যু হবে। ঘরে অগুন দেখে নিরাপদে যাওয়া তার স্ত্রী এমন অবস্থায় পাগল হয়ে ছুটে এসে প্রাণের স্বামীকে অগুনে জলা ঘর থেকে টেনে ছিড়ে বের করে পাশের ঝুপঝাড়ে নিয়ে করুন অহাজারীতে ভেঙ্গে পড়েন। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে আলাপকালে এ করুন ঘটনার বর্ণনাকালে কেন এমন ঘটনা ঘটাল তা নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
Leave a Reply