হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ ==বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার ট্রেড জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা শনিবার সম্পন্ন হয়েছে। টেকনাফের সী-বীচের সেন্ট্রাল রিসোর্টে এ সভা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দুপুরে শেষ হয়। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) সৈয়দ মোঃ নুরুল বাশির ১৯ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। অপরদিকে ১৮ সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মিয়ানমান সিটওয়ে বানিজ্যিক দপ্তরের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর উ সোয়ে উইন মং। সকাল ১০ টা থেকে বেলা পৌঁনে ২ টা পর্যন্ত চলে সভা। সভা শেষে যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা সৈয়দ মোঃ নুরুল বাশির জানান, অত্যান্ত সৌহাদ্যপূর্নভাবে দ্বি-পাক্ষিক সীমান্ত বাণিজ্য বিষয়ক এ সভাটি আন্তরিকতার সাথে শেষ হয়েছে। সভায় আমাদের বেশ কিছু অর্জন হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন থেকে মিয়ানমারে মোবাইল ও ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারবে। সিটওয়ে পর্যন্ত গিয়ে তিন দিন অবস্থান ও পঞ্চাশ হাজার বাংলাদেশী টাকা সঙ্গে নিতে পারবে। এ ছাড়া আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় ছোলা আমদানীতে মিয়ানমার সরকার সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতা জানিয়েছেন, সে দেশে গার্মেন্টস সামগ্রী ও সিমেন্ট বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে তা আরো বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে সার রপ্তানিকে স্বাগত জানাবে মিয়ানমার।
জানা গেছে, সর্বশেষ ৬ষ্ঠ তম বৈঠক অনুষ্টিত হয়েছিল ২০১২ সনের ২ মে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের জেলা শহর সিটওয়ে (আকিয়াব) শহরে। এর কয়েকদিন পরে ৮ জুন ২০১২ মিয়ানমারের মংডু শহরে সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ প্রায় ১ বছর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি উক্ত ঘটনার পর টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য, টেকনাফ-মংডু ট্রানজিট পাস এবং ইমিগ্রিশন যাতায়াত বন্ধ ছিল। উল্লেখ্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ১ম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল টেকনাফের সড়ক ও জনপথ বিভাগের রেষ্ট হাউজে ১ মে ২০১১। ২য় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল মিয়ানমারের মংডু টাউনশীপে ৭ জুলাই ২০১১। আর ২৯ মে ২০১২ মিয়ানমারের আকিয়াবে ৬ষ্ঠ সভার পর দীর্ঘ প্রায় ১বছর আর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। ২১ জুন টেকনাফের হোটেল সেন্ট্রাল রিসোটের্র ৭ম সভায় অতিরিক্ত কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (সাধারণ) সৈয়দ মোঃ নুরুল বশির এর ১৯ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ প্রতিনিধি দলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ছাড়াও বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ, টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্তা, বিজিবি, টেকনাফ সোনালী ব্যাংক ব্যাবস্থাপক, স্থল বন্দর চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফ্রজেন ফুড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের পরিচালক, টেকনাফ চেম্বার অব কর্মাস, সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন, ব্যবসায়ী, টেকনাফ ইউনাইটেড ল্যান্ড র্পোট লিঃ প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
টেকনাফ সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সেক্রেটারী এহেতেশামুল হক বাহাদুর ও টেকনাফ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোঃ দিদার হোসেন জানান, বৈঠকে নির্ধারিত এজেন্ডা ছাড়াও আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে ছোলা আমদানী, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের মিয়ানমারের আকিয়াবসহ বাইরে যাতায়াত সুবিধা, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ব্যবহারের অনুমতি, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানীকৃত ট্যাক্স ফ্রি পণ্যের সেদেশে ট্যাক্স মওকুফ, এলসি খোলা, বর্ডার হাট চালুসহ উভয় দেশের ব্যবসায়িক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং বাণিজ্য প্রসার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উল্লেখ্য ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বানিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ জয়েন্ট ট্রেড কমিশন (জেটিসি) সভায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বি-পাক্ষিক বানিজ্য বৃদ্ধি ও সমস্যা নিরসনে সীমান্ত বানিজ্য সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নিয়মিত আলোচলার লক্ষ্যে উভয় দেশের প্রতিনিধি নিয়ে জয়েন্ট ওর্য়াকিং গ্র“পের বৈঠকের সীদ্ধান্ত নেওয়া হয়।