মুহাম্মদ ছলাহ্ উদ্দিন…টেকনাফে হ্নীলায় নিহত পঞ্চম শ্রেণীর মাদ্রাসা ছাত্র শিশু আজিজ সিকান্দর সোহাগকে (১৩) সিরিঞ্জ দিয়ে বিষ প্রয়োগে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তার বয়সে বড় বন্ধু প্রতিবেশী ডা. ইউছুপ আলী ভূঁইয়ার কর্মচারী মিয়ানমারের নাগরিক মোঃ আবদুল্লাহ (১৯) গত বৃহস্পতিবার রাতে অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে সে এ নিমর্ম হত্যাকান্ড ঘটায়। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তদন্তের স্বার্থে তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে পুলিশ। শনিবার বিকাল ৩টায় ময়না তদন্ত শেষে শাহ মজিদিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শন ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, নিহত সোহাগ জন্মের দেড় বছর পর ২০১১ সালে ১২ সেপ্টেম্বর তাঁর বাবা মাষ্টার সিকান্দর আলম মারা গেলে তার মা রহিমা বেগম ছোট বোন জোবাইদা সিকান্দর ইসমিকাকে গর্ভে নিয়ে হ্নীলা পুরাতন বাজারস্থ নানী সুরত জামালের ভাড়া বাসায় চলে আসে। মামা বাদশা, মমতাজ ও নুরুল আবছার দিনমজুরী করে তাদের লালন-পালন করে আসছে। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবেশী ডা. ইউছুপ আলীর ভূঁইয়ার ছেলে বাহাদুরের বিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়ে সোহাগ আর ফিরে আসেনি। শুক্রবার সকালে নির্জন লবণমাঠে তার লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে ডা. ভূঁইয়ার বাসা থেকে কর্মচারী মিয়ানমার নাগরিক মোঃ আবদুল্লাহ (১৯), শ্যালক মিয়ানমারের নাগরিক রশিদ উল্লাহ (২৩) এবং সোহাগের সমবয়সী বন্ধু স্থানীয় হ্নীলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র মোঃ রফিক (১৩) ও ২য় শ্রেনীর ছাত্র কামরুল ইসলাম মুন্নাকে (১২) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়।
ওসি (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার শুক্রবার বিকালে জানান, আটক ৪ জনের মধ্যে ডা. ভূঁইয়ার চেম্বারের কর্মচারী মিয়ানমারের নাগরিক আবদুল্লাহকে (১৮) আসামী হিসেবে আটক রাখা হয়েছে। বাকীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্লাহ ইনজেকশন সিরিঞ্জের মাধ্যমে সোহাগের শরীরে কীটনাশক প্রয়োগ করে। এ হত্যাকান্ডের সাথে একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। তবে, কারা জড়িত তদন্তের স্বার্থে এ মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়।
এদিকে এলাকাবাসীদের ধারণা, সোহাগের সৎ বাবা মিয়ানমারের নাগরিক মোস্তাক আহমদ এবং ঘটনার দিন রাত থেকে উদাও হয়ে যাওয়া একই বাসার ভাড়াটিয়া অপর মিয়ানমারের নাগরিক নুর হামিদকে (২৫) জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যা রহস্য উদঘাটন হতে পারে।
অপরদিকে পুলিশ শুক্রবার রাতে সোহাগ হত্যা মামলার তথ্য উদঘাটন করতে হ্নীলা বাজার ্এলাকা থেকে দু’শিশু শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেলে সোহাগের সমবয়সী অসংখ্য খেলার সাথী হ্নীলা প্রাইমারী স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা আতঙ্কেগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। অনেকে ক্লাসে বা বাড়ীতে থাকতে চাইছে না। তারা ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের অভিভাকরা দাবী করছে, হত্যার তথ্য উদঘাটনে সোহাগের খেলার সাথীদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে যেন অভিভাবকদের নিরাপদ দূরত্বে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ প্রসঙ্গে টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার জানান, সোহাগের খেলার সাথীদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। পুলিশ কাউকে অযথা হয়রাণী করবে না। শিশুদের তো নয়ই। তিনি পুলিশের পক্ষ থেকে সোহাগের বয়সী খেলার সাথীসহ সকল শিশুদের কোনরূপ ভয় না পেয়ে খেলাধুলাসহ স্কুলের লেখাপড়া নিয়মিতভাবে নির্ভয়ে চালিয়ে যেতে বলেছেন।
Leave a Reply