জেড করিম জিয়া, টেকনাফ।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা শরার্থী হিসেবে বাংলাদেশে কৌশলে প্রবেশ করে শ্রমবাজার এক প্রকার তাদের দখলে চলে গেছে। দাম কম হওয়ায় স্থল বন্দরে শ্রমিক, পরিবহন, নির্মাণ, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাসাবাড়ির পাশাপাশি গ্রামের খেতখামারের কাজেও লাগানো হচ্ছে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের। এতে করে স্থানীয় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় শ্রমিকেরা জানান, মিয়ানমারের নাকফুরা, বলিবাজার, হারিপাড়া, সিকদারপাড়া, ঢেঁকিবনিয়া, সাহেববাজার, মংডু, আকিয়াব, বুচিধংসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গারা নাফনদী অতিক্রম করে টেকনাফে চলে আসছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ভেতরের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও বস্তিতে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গারাও শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। তুলনামূলক পারিশ্রমিক কম নেওয়ায় স্থানীয়দের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের কাজে লাগাচ্ছে মানুষ। যদিও ওয়ার্ক পারমিট (কাজের অনুমতি) ছাড়া রোহিঙ্গাদের এ দেশে কাজ করার অনুমতি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফে কাজ ভেদে একজন দেশি শ্রমিককে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। সেখানে একজন রোহিঙ্গাকে দৈনিক ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা মজুরি দিলেই চলে।
রোহিঙ্গা হোটেল শ্রমিক আলী হোসেন (৩০) বলেন, ‘এখানে কাজ করে যা পাই, তাই লাভ। মালিকেরা আমাদের কাজের বিনিময়ে খাবার দেন, কখনো ক্যা¤প থেকে নিয়ে আসেন।’
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষি শ্রমিক নজির আহমদ (৪০) বলেন, ‘কম দামে রোহিঙ্গাদের পেয়ে খেতের মালিকেরা আমাদের কাজে ডাকেন না।’
হোটেল শ্রমিক হামিদ হোসেন (৩০) জানান, কম বেতনে রোহিঙ্গাদের দিয়ে কাজ করাতে পেরে হোটেলের মালিকেরা স্থানীয়দের কাজ দেন না। তাই পেটের দায়ে তাঁরাও কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কয়েকজন হোটেলের মালিক বলেন, রোহিঙ্গাদের কম বেতনে পাওয়া যায়। আবার স্থানীয় শ্রমিকেরা যথাসময়ে কাজে আসেন না, মালিকের কথাও শোনেন না। এসব কারণেই রোহিঙ্গাদের কাজে লাগানো হয়।
হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা বলেন, সরকারের আইন করা উচিত, যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ না পান। টেকনাফে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের বিতাড়িত করা এবং স্থানীয় শ্রমিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার দাবি করা হচ্ছে ।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে দেশীয় শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, কোনো রোহিঙ্গা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করলে তাঁর ও নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি শরণার্থী শিবিরের চারপাশে সীমানাপ্রাচীরের বিষয়ে সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হবে। এ ছাড়া হোটেল-মোটেল ও বাসাবাড়িতে রোহিঙ্গাদের কাজে না নেওয়ার জন্য মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম ইউনুচ বাঙ্গালী বলেন, ভবিষ্যতে উপজেলা পরিষদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় রোহিঙ্গা শ্রমিকদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।