হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, বনবিভাগের চরম ব্যর্থতা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফেলতির কারণে টেকনাফের রঙ্গিখালী বিশাল আয়তনের গাজী পাহাড়ের বাগান বিরান ভূমিতে পরিণত হওয়া ন্যাড়া বনভূমিতে এখন চলছে জবর দখলের মহোৎসব। অথচ এই ব্যাপারে বনবিভাগ ও মাদ্রাসা ভূমিকা অত্যন্ত হতাশাজনক। জঙ্গলী ফকিরের গড়া গাজী পাহাড় ও তৎসংলগ্ন বিশাল আয়তনের বাগান উজাড় ঘটনায় এখনো কোন আইনগত ব্যবস্থা বা উদ্যোগ নেয়নি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় গ্রামবাসী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের এই ব্যর্থতায় চরমভাবে ক্ষুব্দ। সংরক্ষিত সামাজিক বাগান উজাড় করে ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত করার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় ২ বছরেও বন বিভাগ উক্ত ন্যাড়া পাহাড়ে নতুন করে চারা লাগিয়ে বনায়ন সৃষ্টি করতে পারেনি। এজন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং বন বিভাগের গাফেলতি, দায়িত্বহীনতা ও ব্যর্থতাকে দায়ী করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। এদিকে সামাজিক বাগান উজাড় হওয়ার পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন দৃশ্যমান ও কার্য্যকর কোন ব্যবস্থা না করায় বিরান ভূমিতে পরিণত সেই ন্যাড়া পাহাড়ে শুরু হয়েছে জবর দখল প্রতিযোগীতা। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও বন বিভাগের নিষ্ক্রীয়তার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে জবদখলকারীরা। জানা যায়-টেকনাফের বহুল আলোচিত রঙ্গিখালী গাজী পাহাড় ও তৎসংলগ্ন সামাজিক বাগানের হাজার হাজার গাছ দিন দুপুরে কেটে নিয়ে গিয়েছিল স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বর্তমানে গাজী পাহাড় ও আশ-পাশের বিশাল আয়তনের সংরক্ষিত সামাজিক বাগানের বনভূমি ন্যাড়া অবস্থায় রয়েছে। সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্মমভাবে গাছ কাটার যে নুমনা দেখা গেছে তা শোনার চেয়ে বহু গুনে ভয়াবহ। প্রকাশ্যে দিবালোকে দিন দুপুরে নির্বিচারে হাজার হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে গিয়েছে বনদস্যু দুবৃত্তের দল। বর্তমান সরকার দলীয় স্থানীয় পর্যায়ের কিছু নেতা এ্ সামাজিক বাগান উজাড়ে সরাসরি জড়িত বলে জানা গেছে। কিন্তু তাদের দাপট এত বেশী, কেউ মুখ খোলে প্রতিবাদ করার সাহস করেনি। রঙ্গিখালী দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা(রঙ্গিখালী ইসলামিক সেন্টার) প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব ড. গাজী কামরুল ইসলাম। তিনি মাদ্রাসার উন্নয়নে বহু চেষ্টা-শ্রম ও অর্থ ব্যয়ে বিশাল আয়তনের বনভূমিতে বিভিন্ন জাতের চারা রোপন করে বনায়ন করেছিলেন। তিনি নিজে থাকতেন একটি টিলার উপর। স্থানীয় লোকজন সেই পাহাড়ের নাম দিয়েছিল‘গাজী পাহাড়’। এই গাজী পাহাড়ের চতুর্দিকে গাছ আর গাছ। চুড়ায় ছোট্ট একটা কুঠিরে তিনি থাকতেন। গাজী পাহাড়ের পশ্চিমে, উত্তরে এবং দক্ষিণের বিশাল আয়তনে ছিল সামাজি বাগান। বর্তমানে সম্পূর্ণ উজাড়। কেটে উজাড় করা গাছের মোথাগুলো কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, স্থানীয় লোকজন জ্বালানী কাঠ বানাতে গাছের মোথা গুলো কেটে ও উপড়ে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানায়- বন দস্যুরা প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার গাছ সাফাই কাটার মতো কেটে নিয়ে গিয়েছে। কারা কেটেছে তাদের নাম বলতেও তারা নারাজ। শুধু বলে গাছ চোর, সন্ত্রাসী ও ডাকাত। রঙ্গিখালীর সাধারণ গ্রামবাসীর বড় দুঃখ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ড. গাজী কামরুল ইসলাম প্রকাশ জঙ্গলী ফকির বর্তমানে নেই। কিন্তু তার হাতে গড়া বাগানটি রক্ষা করতে পারেনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বাগান রক্ষায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় লোকজন জানায়- বিশাল এই মাদ্রাসার বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী-শিক্ষক রয়েছেন। তারা আন্তরিক ও সৎ সাহস নিয়ে এগিয়ে আসলে অবশ্যই গ্রামবাসী ঝাপিয়ে পড়ত। কিন্তু তারা তা করেননি। তাদের দ্বারা রক্ষা করা সম্ভব না হলেও বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। তারা আরও জানায়- বন দস্যুরা বাগানের হাজার হাজার গাছ কেটে তো নিয়ে গিয়েছেই, এমনকি গাজী পাহাড় যেখানে জঙ্গলী ফকির থাকতেন, সেই গাজী পাহাড়েও একটা গাছ আস্ত রাখেনি। সব কেটে বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে। জঙ্গলী ফকির থাকার একটা ঘর ছিল, স্মৃতি বিজড়িত সেই ঘরটিও ভেঙ্গে নিয়ে গিয়েছে। টিলার চুড়ায় যে কুটিরে জঙ্গলী ফকির থাকতেন তার প্রাঙ্গণে জঙ্গলী ফকির স্বয়ং একটা তাল গাছের চারা রোপন করেছিলেন। বন দস্যূ দুবৃত্তের দল বিশাল আয়তনের সামাজিক বাগনের গাছগুলো কেটে নিয়ে গিয়ে বনভূমিকে ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত করে ক্ষান্ত হয়নি, সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠা তাল গাছের চারার ডালপালাও কেটে ফেলেছে। তবে চারাটি এখনও জঙ্গলী ফকিরের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে স্বাক্ষি হয়ে আছে। এব্যাপারে জানতে চাইলে রঙ্গিখালী দারুল উলুম ফাযিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওঃ কামাল হোছাইন জানান অবৈধ ভাবে গাছ কাটা শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিষয়টি স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু কেউ এব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি গাছ কাটায় যারা জড়িত তাদের নাম উল্লেখ করে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছিল। বিশাল আয়তনের বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে জবর দখলের মহোৎসব চলছে- এব্যাপারে প্রশাসন তথা বনবিভাগ আইনগত কি ব্যবস্থা নিয়েছে এবং পুনরায় বনায়ন করা হয়েছে কিনা ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জানতে চাইলে টেকনাফের রেঞ্জ অফিসার মীর আহমদ জানান- আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। তিনি নিকটস্থ মোচনী বনবিট অফিসারের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। মোচনী বনবিট অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেন- আমি নতুন এসেছি, এব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।##################
Leave a Reply