আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ /
নয়াপাড়া ও মোছনীপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত বাজেটের অজুহাত তুলে চাকুরী থেকে বিনা দোষে চাকুরীচ্যুত করা ও রোহিঙ্গাদের চাকুরীতে নিয়োগ দেয়ার প্রতিবাদে মোছনী পাড়া ও নয়াপাড়াবাসী তাদের ন্যায্য দাবী আদায়ের লক্ষে আন্দোলন শুরু করেছে। ৭ জানুয়ারী সকাল থেকে তাদের আন্দোলন শুরু হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও গুলো থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের চাকরীচ্যুত করা এবং তদস্থলে রোহিঙ্গাদেরকে চাকুরীতে নিয়োগের প্রতিবাদে এই আন্দোলনের ঘোষনা দেয়া হয়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা। গ্রামবাসীর পক্ষে স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আলী ও গ্রাম সর্দার জকির আহমদ আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আন্দোলনের প্রথম দিনে এনজিও সংস্থা এসিএফ কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে (কর্মস্থলে) ঢুকতে দেয়া হয়নি। এদিকে নয়াপাড়া ও মোছনী শরনার্থী ক্যাম্পে গোটি কয়েক দেশীয় কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এসিএফ এর আওতাধীন ৫০ জন, মিনিষ্ট্রি অব হেল্থ (মোহ) এর আওতাধীন- ২৮ জন, ট্যাকনিক্যাল এসিসট্যান্ট (টাই) এর আওতাধীন ৬৫ জন, আরআইবি (রিব) এর আওতাধীন ১২ জন, বিডিআরসিএস এর আওতাধীন ৪৬ জন ও স্কুল শিক্ষক ৬৫ জনসহ মোট ২৬৬ জন চাকুরীতে কর্মরত আছে বলে জানা গেছে। হ্নীলা ইউপির ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলী জানান, মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা জান্তা সরকারের নির্যাতন সহ্য করতে না পেয়ে এদেশে আশ্রয় ও সেবা নিতে এসেছে কিন্তু এনজিওরা দেশীয় এবং স্থানীয়দের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ করা হচ্ছে এবং স্থানীয়দের শ্রম বাজার তাদের দখলে রেখেছে। এদিকে আন্দোলন থামাতে নয়াপাড়া ক্যাম্প ইনচার্জ ড. কামরুজ্জামান গ্রামবাসীদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। কিন্তু গ্রামবাসীরা স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদির উপস্থিতিতে বৈঠকের কথা বলেন এবং তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। ঘটনাস্থলে টেকনাফ মডেল থানার পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ১৯৯২ সনের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের দ্বারা পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, চাকুরী, আইন শৃংখলাসহ সর্ব ক্ষেত্রে বহুমূখী ক্ষতির বিভিন্ন দিক বিস্তারিত ও জোরালো ভাবে তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। প্রসংগত, রাহিঙ্গা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসাবে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা নিম্ম বেতনভূক্ত কর্মচারী পদে নিযুক্ত ছিল। কিন্তু নানা অজুহাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার স্থানীয় বেকার যুবক বাসিন্দাদেরকেই চাকুরীচ্যুত করে আসছে। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে স্থানীয়দের চাকরীচ্যুত করে তদস্থলে রোহিঙ্গা নিয়োগ করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী এবং অমানবিক। ক্যাম্পের সরকারী দপ্তরসহ এনজিওগুলোতে এভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অব্যাহত চাকুরীচ্যুতির কারনে বর্তমানে স্থানীয়দের কর্মরতদের সংখ্যা অতি নগন্য। উপরন্তু আবারও কিছু স্থানীয় বাসিন্দা কর্মচারীদের কয়েকটি এনজিও বাজেটের অজুহাত তুলে চাকুরীচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ নিয়ে পুরোগ্রামবাসীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রসংগত, এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরের ১ নং অংশে ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে এক যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরিস্থিতি অবনতির আশংকায় স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোঃ আলী প্রশাসনের সাথে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নেন। স্থানীয় গ্রামবাসী, জনপ্রতিনিধি, ক্যাম্প ইনচার্জ ড. কামরুজ্জামান এবং ক্যাম্পে কর্মরত সরকারী ও এনজিও সংস্থার প্রতিনিধি অংশ গ্রহন করেন। যৌথ বৈঠকে ক্যাম্প ইনচার্জ ড. কামরুজ্জামান গ্রামবাসীদের দুঃখের কথা ও দাবী সমূহ মনোযোগ এবং গুরুত্বসহকারে শুনেন। বিষয়টি লিখিত ভাবে যথাযথ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত পৌঁছে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। ঐ বৈঠকের ১১ দিন পর স্থানীয় মেম্বার মোঃ আলী, গ্রাম সর্দার জকির আহমদ ও গ্রামবাসীরা জানান আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। অনতি বিলম্বে রোহিঙ্গাদের চাকুরী থেকে বাদ দিয়ে দেশীয় ও স্থানীয়দের নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।