গোলাম আজম খান: জোয়ারের তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও নাজিরপাড়া দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়ক যোগাযোগ। এখন নৌকাই এলাকায় চলাচলের একমাত্র ভরসা। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে গ্রাম ও ফসলিক্ষেত, লবণের মাঠসহ বিভিন্ন শিাপ্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। জোয়ারের পানি প্রবল বেগে প্রবেশ করায় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া, পৌরসভা জালিয়াপাড়া, সাংবাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের ৩০টি গ্রাম হুমকির মুখে রয়েছে। বর্তমানে প্রায় শতাধিক পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এক দিকে সাগরের উত্তাল ঢেউ অন্য দিকে পূর্ণিমার প্রভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদ ও ভিটেবাড়িগুলো সম্পূর্ণভাবে সাগর গ্রাস করেছে। এ ছাড়া একটি জামে মসজিদও সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধের ভাঙা একটি অংশ দিয়ে পানি ঢুকে এক কিলোমিটার বাঁধটি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে সাগরের সাথে মিশে গেছে। শতশত পরিবার সাগর ও নাফ নদীর লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত ও পানিবন্দী রয়েছে। শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়ায় সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়া ভিটেবাড়ির এক মালিক ােভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষা এলেই তড়িঘড়ি করে বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ আরম্ভ করা হয়। ঢিলেঢালা বেড়িবাঁধ নির্মাণ অসম্পূর্ণ ও টেকসই না হওয়াতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে না করতেই বিধ্বস্ত হয়ে বারবার জোয়ারের পানি ঢুকে এলাকা প্লাবিত হচেছ এবং বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ভিটেবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অপর দিকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ ও চিংড়ি ঘের ডুবে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকার চিংড়ি ও মৎস্য প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকার চিংড়ি এবং বিভিন্ন জাতের মাছ ভেসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬৮ নম্বর ফোল্ডারের কয়েকটি অংশ বিশেষত শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় নির্মাণাধীন এবং নবনির্মিত ও সংস্কার করা বাঁধের কাজে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপির কারণে কাজ শেষ হতে না হতেই ব্যাপক আকারে ভাঙন ও বিধ্বস্ত হয়ে ভিটেবাড়ি সাগরে তলিয়ে গেছে। বর্ষার শুরুতেই বেড়িবাঁধের এই ব্যাপক ও ভয়াবহ ভাঙনে উপকূলীয় এলাকার লাধিক বাসিন্দা চরমভাবে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। উল্লেখ্য শাহপরীর দ্বীপের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক পুরনো। ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই ঐতিহাসিক বদর মোকাম সাগরে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বাকি ভূখণ্ড যা আছে তাও ভয়াবহ হুমকিতে এবং বিলীন হচ্ছে। নাফ নদীর উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন দিয়ে টেকনাফে পানি ঢুকে ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এমনকি টেকনাফ জালিয়াপাড়া রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে শিার্থীদের লেখাপড়ার বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। এসব এলাকায় নাফ নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে অনেক বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। এ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে কয়েক বছর ধরে পৌরসভার সাইডপাড়া, চৌধুরীপাড়া, উত্তর, মধ্যম ও দণি জালিয়াপাড়া, খাংকার ডেইল, কায়ুকখালীপাড়া, নাইট্যংপাড়া, সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া, মগপাড়া, লেজিরপাড়া, আছারবনিয়া, ঝিনাপাড়া ও নয়াপাড়া এলাকার চিংড়ি ঘের, ফসলিজমি, বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও শিাপ্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়ছে। টেকনাফ বেড়িবাঁধের ৬৭ ও ৬৮ নম্বর পোল্ডারের ভাঙন ভেড়িবাঁধ সংস্কারে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড একের পর এক টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। সরকার বছরের পর বছর ধরে নাফ নদীর ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ সংস্কার করলেও জোয়ারের তোড়ে তা ভেঙে পড়ছে। বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীর কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের লবণ-পানি উপকূলীয় এলাকা গ্রাস করছে। এ অবস্থায় তিগ্রস্ত এলাকাবাসীর দাবি, ত্রাণ চাই না, শুধু টেকসই বেড়বাঁধ চাই। এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দীন দেরিতে অর্থ ছাড়ের কথা স্বীকার করে বলেন, শাহপরীর দ্বীপে ব্লক তৈরি বাবদ ৩২ লাখ টাকা এবং টেকনাফ অংশে অর্ধ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। যথা সময়ে কাজ না করতে পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় শাহপরীর দ্বীপের টেন্ডার দুটি বাতিল করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ দিকে নাফ নদীর জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় স্থানীয়রা ােভ প্রকাশ করে বলেন, নাফ নদীর বাঁধ সংস্কার নির্মাণকাজে ঠিকাদাররা অনিয়ম করায় প্রতি বছর আমাদের কষ্টের শেষ থাকে না। লবণ -পানি ২০০৭ সাল থেকে আমাদের গ্রাস করে চলছে। ফলে দালান ও সেমিপাকা, ঘরবাড়ি, শিাপ্রতিষ্ঠানসহ গাছপালা ধ্বংস হয়ে যাচেছ। তাদের দাবি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জোয়ারের হাত থেকে বাঁচতে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীতে পরিকল্পিত পাথরের ব্লক ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরি।
Leave a Reply