জেড করিম জিয়া…টেকনাফ স্থল বন্দরে কাঠের শ্রমিকের কাজ করে দিনে আয় ২/৩ শ টাকা। আটজনের সংসারে ২/৩ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে নুন আনতে পানতা ফুরায়। বন্ধুরা বলেন, বন্দরে যে কাজ করিস তাতে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুকি। তার চেয়ে কিছু টাকা খরচ করে একবার ঝুকি নিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে পারলে জীবনযাপনের নিশ্চয়তা এসে যাবে। শেষ পর্যন্ত থানা হাজত হলো অবশেষে আমার ঠিকানা। এভাবে উখিয়া থাইংখালী এলাকার মোঃ ইসলামের পুত্র আলী আকবর (২১) টেকনাফ হাজতে বসে প্রতিবেদককে তার হতাশার কথা জানান।
সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা কক্সবাজার জেলায় উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। টেকনাফ সীমান্তবর্তী উপকুলীয় এলাকা শামলাপুর, শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন থেকে ইঞ্জিনের ট্রলারে করে দালালের হাত ধরে অনিশ্চিত এক যাত্রায় পাড়ি দিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। গতকাল ২৩ সে্েপটম্বর রবিবার ভোররাতে শামলাপুর এলাকার চিহ্নিত দালাল বার্মাইয়া লেডু মাঝি ও শামলাপুর রশিদ আহমদের পুত্র আইস আলমের হাত ধরে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতিকালে স্থানীয় জনতার ধাওয়ার মুখে ২ দালাল পালিয়ে গেলেও মালয়েশিয়াগামী ৮ যাত্রীকে আটক করে শামলাপুর পুলিশ ফাঁিড়তে সোপর্দ করে। তারা হলো ঃ শামলাপুরে মনিরুজাম্মানের পুত্র ফজল আহমদ (১৮), হোছনের পুত্র সোনা মিয়া (২৪), মাহফুজুর রহমানের পুত্র আবদুল করিম (১৬), মোঃ আবু ছিদ্দিকের পুত্র মোঃ শাকের (২৪), জাহাজপুরার আমির হামজার পুত্র মোঃ করিম (১৭), ফরিদ হোছনের পুত্র ইসমাইল (১৮), উখিয়া থাইংখালী এলাকার মোঃ ইসলামের পুত্র আলী আকবর (২১), রবি উল্লাহর পুত্র এনায়েত উল্লাহ (২৫)। অন্যদিকে একইদিন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৪২ ব্যাটলিয়ন মালয়েশিয়া যাওয়ার আশায় বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকালে স্থানীয় ১ দালালসহ মিয়ানমারের ৬১ জন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করে। পরবর্তীতে বিজিবি বিকাল ৫ টায় স্ব স্ব সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের স্বদেশ ফেরত পাঠিয়ে স্থানীয় চিহ্নিত দালাল হাফেজ উল্লাহকে পুলিশে সোপর্দ করে। টেকনাফ থানা ওসি (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার জানান, বিজিবি ও পুলিশ কর্তৃক আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, এভাবে অবৈধভাবে স্বপ্নের দেশে যাওয়ার আকাঙ্খাই সাগরের মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে কিংবা ট্রলারের তলা ফুটো হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর সংবাদ কারও অজানা নয়। দালালের খপ্পরে পড়ে বিশাল বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের কোস্টগার্ডের হাতে বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে হাজারেরও অধিক মালয়েশিয়াগামী যাত্রী। গত কয়েকমাস আগে ভারতের আন্দামান জেল থেকে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরে এসে জানান, নিজের সর্বোচ্চ সম্পদ বিক্রি করে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে দালালদের হাতে টাকা তুলে দিয়। দালালরা তাদের আশ্বস্থ করেছিল মধ্য সাগরে তাদের জন্য বিশাল জাহাজ অপেক্ষা করছে। ছোট ছোট বোটে করে নিয়ে তাদেরকে জাহাজে তুলে দেওয়া হবে।
দালালচক্ররা বর্ষা যেতে না যেতে মালয়েশিয়া মানব পাচার শুরু করে দিয়েছে। গত কয়েকমাস আগে বর্ষার শুরু পর্যন্ত টেকনাফ, কক্সবাজার সহ একাধিক দালাল চক্র অবৈধভাবে মানব পাচার করে। জীবনের ঝুকি নিয়ে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে অনেকের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে এবং থানায় স্থানীয় দালালের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রুজু হয়েছে। থানা পুলিশ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নামেমাত্র কয়েকজন দালালকে আটক করলেও সম্প্রতি সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বের হয়ে আসে। একাধিক প্রাপ্ত সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়গুলোতে কয়েকটি দালালচক্র মালয়েশিয়া মানব পাচার করত এবং একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করে যেত। কিন্তু বর্তমানে টেকনাফ উপজেলার সাগরপথে মালয়েশিয়ার দালাল চক্রের সদস্যরা একটি সিন্ডিকেট করে পাচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
টেকনাফ ৪২ ব্যাটলিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল জাহিদ হাসান জানান, সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী অনুপ্রবেশকারী ও অবৈধপথে মালয়েশিয়া যাত্রীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছে। ক্ষেত্র বিশেষে মানবিক দিক বিবেচনা করে অনুপ্রবেশকারীদের স্বদেশে ফেরত পাঠিয়ে ও স্থানীয় দালালদের আইনের কাঠগড়ায় দাড় করাচ্ছি।
Leave a Reply