টেকনাফ/ জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপি থেকে আলাদা করতে চায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে একঘরে করার পরিকল্পনা থেকেই এ রকম চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ জামায়াতকে নানাভাবে চাপে রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামীকে বিভক্ত করারও চেষ্টা করা হবে। সরকারের কাছে খবর আছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের দায়ভার নিতে জামায়াতের একটি অংশের আপত্তি আছে। ফলে ওই অংশকে দল থেকে আলাদা করে নির্বাচনমুখী করার একটা কৌশল নেওয়া হতে পারে। সরকারের একটি প্রভাবশালী মহল জামায়াতে ইসলামীর ওই অংশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে।
সরকারের সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক বা অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে সরকার ও আওয়ামী লীগের। তাই দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতকে নিয়ে সরকারি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা নানা পরিকল্পনা ও কৌশল আঁটছেন। জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের বিচার করা থেকেও সরকার পিছু হটবে না।
জামায়াতের সঙ্গে সরকারের ভেতরে ভেতরে যোগাযোগ হচ্ছে কি না, খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়া নিজের হাতের কাদা অন্যের গায়ে মাখানোর চেষ্টা করছেন। মানুষ তাঁর কথায় বিভ্রান্ত হবে না। তিনি বলেন, এটা সবাই জানেন, খালেদা জিয়া জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন। মুজাহিদ সাংসদ না হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে মন্ত্রী করেছেন। আবার জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
সরকারি সূত্র জানায়, সরকারের শীর্ষপর্যায়ে খবর আছে, বিএনপির চেয়ারপারসন সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে সে দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন যে জামায়াতে ইসলামীসহ উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রয়োজনে সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। সরকার চায়, এ রকম প্রতিশ্রুতি বিএনপি প্রকাশ্যে দিক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার মনে করছে, বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করতে পারে। তারা সরকারকে একটি একদলীয় নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী বড় জোট করতে সমর্থ হওয়ায় বিএনপি একদলীয় নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়। তাই বিএনপি ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে সরকার গঠনে সমর্থ হলেও অল্প দিনের মধ্যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। একইভাবে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি বিএনপি আরেকটি একক নির্বাচনের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা হতে পারেনি।
আগামী নির্বাচনে বিরোধী দলকে এ রকম সুযোগ না দিতেই সরকার বিএনপি ও জামায়াতের জোটগত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের শীর্ষপর্যায় মনে করছে, জামায়াতকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারলে তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে বাধ্য হবে। তখন বিএনপি এককভাবে নির্বাচন বর্জন বা আন্দোলন করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার সুযোগ পাবে না।
জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের বিচার করাই আমাদের চিন্তাভাবনা।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামীকে গণবিচ্ছিন্ন করা আমাদের মূল লক্ষ্য।’
Leave a Reply