জাকাতের মাধ্যমে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৪.৫ শতাংশ বা ১৬ হাজার কোটি টাকা অর্থ পাওয়া সম্ভব, যা দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৪০ শতাংশ। গতকাল এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য দিয়ে সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টের (সিজেএম) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আইয়ুব মিয়া বলেন, ‘আমাদের নীতিনির্ধারকদের জাকাতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে, যাতে জাকাতকে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয়।’
বৃহস্পতিবার মতিঝিলের ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে ‘দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সিজেএম। এতে আলোচকরা বলেন, বিদ্যমান ঋণ কর্মসূচিতে দারিদ্র্য আরো বৃদ্ধি পায়। তবে জাকাত একজন মানুষকে দারিদ্র্য অবস্থা থেকে বের করে আনে।
ড. আইয়ুব মিয়া বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে ৪৩ থেকে ৬১ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। এত চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কোনোভাবে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তাদের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য কোনো পদক্ষেপ নেই। ফলে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যায়।
ব্যুরো অব ইসলামিক ইকোনমিকের মতে, ২০১০ সালে বাংলাদেশে জাকাত আদায়ের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৪০ শতাংশ। ড. আইয়ুব বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সঠিকভাবে আদায় করা হলে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার জাকাত আদায় সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, জাকাতের টাকা দিয়ে গ্রামাঞ্চলের ৮০ শতাংশ দারিদ্র্য বিমোচন হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জাকাত দেওয়ার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। আমরা হাজার হাজার দরিদ্র মানুষকে ডেকে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে লুঙ্গি-শাড়ি দিচ্ছি, এতে একজনও দারিদ্র্যমুক্ত হচ্ছেন না। অথচ সঠিকভাবে পাঁচ-ছয়জনকে জাকাত দিলে এক বছরের মধ্যে তাঁরা দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারেন। জাকাতের উদ্দেশ্যে হচ্ছে দারিদ্র্যমুক্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে জাকাত কোনো দান নয়, অধিকার।’
ডিসিসিআই সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে জাকাতের বিকল্প কিছু নেই। ইসলাম ধর্মে প্রতিটি মুসলমানের জন্য জাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সম্পদের বৈষম্যের কারণে দিন দিন সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। অথচ জাকাতের মাধ্যমে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, ডিসিসিআই সহসভাপতি হায়দার আলী খান, পরিচালক নাসির উদ্দিন খান ও আবদুল আজিজ সরকার।
Leave a Reply