টেকনাফ নিউজ ডেস্ক::
গ্রাম থেকে কম দামে চামড়া কিনে বেশি দরে বিক্রির স্বপ্ন দেখেছিলেন আরজু শেখ। চামড়া বেচা-কেনা তার পেশা নয়। অনেকটা শখের বশে ঈদের সময় বাড়তি আয়ের আশায় সিলেট থেকে কয়েক বন্ধু মিলে দুই ট্রাক গরুর চামড়া কিনে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন।
গ্রামে-গ্রামে ঘুরে প্রতি পিচ চামড়া ৬০০ টাকা দরে কিনে ঢাকায় এনে বিক্রি করতে পারছেন না। বললেন, এক ট্রাক মাল আনতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এখন ট্রাক ভাড়ার টাকাও উঠছে না।
চামড়ার বাজারে ব্যাপক ধস
শুধু আরজু শেখ নয়, এমন অবস্থা মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের। ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর চামড়ার পাইকারি বাজার লালবাগের পোস্তায় গিয়ে সরেজমিনে ঘুরে এবং ব্যবসা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
আরজু শেখের ভাষ্য, এসব চামড়া বিক্রি করতে পারছি না, ফেরত নিয়ে যেতে পারছি না। আর ফেলেও তো দিতে পারি না। কিন্তু আড়তদাররা পচা বলে চামড়া কিনছেন না।
ফলে চামড়া নিয়ে আড়তে আড়তে ঘুরছেন আরজু শেখ। এক আড়তে গিয়ে দেখা যায়, আড়তদারকে তিনি বলছেন- আমাকে বাঁচান, মহাজন। আমি মালগুলো যে দামে কিনছি সেটাই দেন। তাতেও লোকসান। ট্রাক ভাড়া লেবার খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হবে।
তাতেও মন গলছে না আড়তদারদের। আড়তদার শাজাহান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওরা বললেই তো হবে না। সব কালকের কোরবানির চামড়া আসছে আজ (বৃহস্পতিবার)। কোন চামড়ার গায়ে লবণ নাই। চামড়া ছিলার ১২ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে না পারলে গ্রেড থাকে না। এই মাল কিনে আমরা ট্যানারিতে দিতে পারবো না। যেটা আমরা লোকসানে পড়বো, সেটা কি বেশি দামে কিনবো?’
আড়তদাররা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে নিম্নমুখী বলে কেউ বেশি চামড়া কিনতে আগ্রহী নয়। আড়তদার মোসলেম উদ্দিন বলেন, আমাদের গতবারের চামড়াই বেচতে পারি নাই। এবার আবার নতুন চামড়া কিনবো কিভাবে? ট্যানারি মালিকরা মাল কিনছে না। আবার বাকিতে মাল বিক্রি করে টাকা উঠাতে পারি না। এভাবে চললে তো ব্যবসা টিকবে না।
তিনি বলেন, চামড়ার দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে আরও কমে যাবে।
এদিকে যেসব চামড়ায় লবণ মাখানো হয়নি সেগুলো পচতে শুরু করেছে। এসব চামড়া থেকে এখনই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
ঢাকার বাইরের কোনো চামড়া কিনতে আড়তদারদের তেমন আগ্রহ নেই। তাদের দাবি, এসব চামড়ার মান ভালো না। একেবারে নিম্নমানের চামড়া। তাছাড়া ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় গ্রেড কমে গেছে।
আর ঢাকার বাইরে থেকে আসা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এর জন্যে দুষছেন রাস্তার যানজটকে। রাজশাহী থেকে চামড়া নিয়ে সকালে পোস্তায় এসেছেন আবুল হাসেম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সাড়ে ৬০০ টাকা করে চামড়া কিনে এখন দুইশ’ করে বিক্রি করতে পারছি না। চামড়া আনতে আনতে নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তায় যানজট থাকলে আমরাই কী করবো।
‘গতকাল (বুধবার) রাত ১০টায় রওয়ানা দিয়ে সকালে পৌঁছেছি। এখন এই চামড়া কী করবো বুঝতে পারছি না।’
মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বরছেন, এবার চামড়া কিনে তারা সর্বহারা। একদিকে চালান উঠছে না, অন্যদিকে বৃথা যাচ্ছে পরিশ্রম।
Leave a Reply