ইকবাল আজীজ টেকনাফী = আরবি শব্দ ‘কুরবান’। ফার্সি বা উর্দুতে একে ‘কোরবানি’ বলে। যার অর্থ নৈকট্য, উৎসর্গ, জীবন বা আত্মাদান করা ইত্যাদি। স্রষ্টার নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে যিলহজ মাসের দশ, এগার ও বার তারিখে শরীয়তের আদেশ মোতাবেক কুরবানির যোগ্য পশু জবেহ করে শরীয়তের ভিতরে আনন্দ-খুশি করাকে ঈদুল আযহা বলে। ৮৬ বছর বয়সে হযরত ইব্রাহীম (আ.)আল্লাহর নিকট পুত্র সন্তান চাইলেন। আল্লাহ তাঁকে পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে দান করলেন। তাকে কুরবানি করার হুকুম করলে, অতপর সে পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হলেন। যার ফলে হযরত ইব্রাহীম (আ.) ‘খলিলুল্লাহ’ উপাধি লাভ করলেন। তাঁদের সেই মহান ত্যাগের স্মৃতি বহন করে আজও মুসলিম জাতি ‘সুন্নতে ইব্রাহীম’ হিসেবে কুরবানি করে থাকে। আল্লাহ বলেন, “অতএব, আপনি (হে রাসুল) আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন” (সূরা আল কাওসার : ০২)। কুরবানির উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর প্রেম অর্জনের মাধ্যমে ধর্মনিষ্ঠা ও তাকওয়া অর্জন করা। তাইতো এরশাদ হয়েছে, “আল্লাহর কাছে তোমাদের কুরবানিকৃত পশুর মাংস ও রক্ত পৌঁছায় না বরং তোমাদের ধর্মনিষ্ঠা ও খোদাভীতি পৌঁছে থাকে” (সুরা হজ: ৩৭)। উট ও গরু ৭ জনের পক্ষ থেকে, ছাগল বা বকরী এক জনের পক্ষ থেকে কুরবানি করা যায়। হযরত জাবির (রা.)থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “আমরা হুদায়বিয়ার ! (সন্ধির) বছর হযরত রাসুলে পাক (স.) সাথে একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি উটও সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানি দিয়েছি” (তিরমিযি শরিফ: ৮৪৭)। আল্লাহ বলেন, “হে রসূল (স.)! আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মরণ সবই একমাত্র আল্লাহর নামে বা উদ্দেশ্যে নিবেদিত” (সুরা আনআম: ১৬২)। তাই নবীজিও আল্লাহর শেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কোরবানির দিন রাসুল (স.) দুটি শিং বিশিষ্ট সাদা ও কাল মিশ্রিত দুম্বাকে কোরবানির উদ্দেশ্যে কিবলামুখী করে শায়িত করেন এবং দোয়া করেন— “ইয়া আল্লাহ! এটি তোমারই পক্ষে এবং তোমারই জন্যে-মুহাম্মদ ও তার উম্মতের পক্ষ হতে। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। অতঃপর তিনি সে দুম্বাকে জবেহ করেন” (আবু দাউদ শরিফ: ২৭৮৬) কুরবানি শিক্ষা দেয়- মিথ্যাচার, ঘুষ-দূর্নীতি, অনাচার, অবিচার, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, হানাহানি, স্বার্থপরতা, হিংসা, রাগ, পরনিন্দা, অহমিকা, দাম্ভিকতা ত্যাগ করে পৃথিবীতে শান্তি ও সাম্যের পতাকা সমুন্নত রাখতে। এছাড়া এর ফলে আমরা সকল প্রকার লোভ-লালসা ও ইন্দ্রিয় কামনা- বাসনার জৈবিক তাড়না হতে মুক্ত ও পবিত্র হয়ে মহান স্রষ্টার প্রতি আত্মোৎস্বর্গকৃত বান্দা হওয়ার উপলক্ষ পেয়ে থাকি। কুরবানি করার মধ্য দিয়ে মূলত নিজের কলবের কু-প্রবৃত্তি তথা জীবাত্মাকে জবেহ করে বাস্তব জীবনে পরমাত্মা তথা স্রষ্টার স্বরূপ বিকশিত করাই মোমেন বান্দার লক্ষ্য। উম্মতে মুহাম্মদীকে মহানবী (স.) এর কুরবানি দেয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আব্বা, আম্মা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, স্ত্রী, সন্তান প্রমুখ কারো নামে কুরবানি হবে না। কুরবানি করতে হবে বান্দার পক্ষ থেকে একমাত্র আল্লাহর নামে বা উদ্দেশ্যে। গরু বা ছাগল যাদের নামে কুরবানি দেয়া হবে তাদের নাম লিখে বা মুখে উচ্চারণ করে বলতে হবে এদের পক্ষ থেকে এই পশুটি আল্লাহর নামে কুরবানি করছি। সে সাথে আপন কলবে খেয়াল রেখে আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতি করে কল্পনা করতে হবে যে, আমার সম্মুখে রাখা পশুর মত যে পশুটি আমার ভেতরে বসত করে (নফস) তাকেও আমি বাতেনীভাবে আল্লাহর নামে কুরবানি করছি। তবেই ,হবে কবুলযোগ্য কোরবানি ,আল্লাহ আমাদের কবুল করুন ৷আমীন
ইকবাল আজীজ টেকনাফী সাহিত্য বিভাগ পটিয়া.
Leave a Reply