সৌদি আরব সরকার ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করায় বাংলাদেশের ১২টি হজ এজেন্সি হজযাত্রীদের কাছ থেকে ‘মোয়াল্লেম ফি’ নিয়েও বাড়িভাড়া ও পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারছে না।এতে করে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশির হজে যাওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বলে জানিয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।সংগঠনের নেতারা বলেছেন, সরকারের উচিৎ কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সৌদি কর্তৃপক্ষের এই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। তবে সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।হজ প্যাকেজ না মানা এবং সৌদি আরবে অতিরিক্ত সময় থাকার অভিযোগে গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের ১২টি এজেন্সির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। নিবন্ধিত এসব প্রতিষ্ঠান এবার সাড়ে তিন হাজার হজযাত্রীর কাছ থেকে মোয়াল্লেম ফি জমা নিয়েছে এজেন্সিগুলো হচ্ছে- এয়ার মেটকো, কলম্বিয়া ট্রাভেলস, সাদ ট্রাভেলস, ইসলামিয়া ট্রাভেলস, ফার্স্ট বাংলাদেশ, হলিউড ট্রাভেলস, এয়ার পিস ট্রাভেলস, নিউ ইমাম ট্রাভেলস, সায়েম ট্রাভেলস, বাবে মদিনা, মোস্তফা এয়ার ট্রাভেল ও ওয়ার্ল্ড লিংক।
হাবের মহাসচিব এমএ রশিদ শাহ সম্রাট বলেন, “সরকার কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। সমাধান না হলে সরকারকেই বিকল্প ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের হজে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে পুরো দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।”
এই হাব নেতার মতে, এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে সৌদি আরবে অতিরিক্ত সময় হজযাত্রীদের রাখার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ‘খুব একটা’ গুরুতর কিছু নয়। নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট নিশ্চিত করতে না পারায় তাদের ‘দুয়েকদিন’ বেশি থাকতে হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এজেন্সিগুলোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে তাদেরই কাজ করতে হবে। তাদের সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে না।
“তবে এসব সংস্থার কাছে টাকা জমা দেওয়া হজযাত্রীদের বিষয়ে সরকার ভাবছে। তাদের বিকল্প ব্যবস্থায় অন্য এজেন্সির মাধ্যমে অথবা সরকারের দলের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হতে পারে।”
এবার হজে যাওয়ার জন্য এসব এজেন্সিতে যারা টাকা দিয়েছেন, তাদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি, হাব অথবা উত্তরার আশকোনায় হজ অফিসে যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এর আগে জুলাই মাসের শুরুতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আরো ১৪টি হজ এজেন্সির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত দুই বছর তাদের মাধ্যমে হজে যাওয়া কেউ আর দেশে ফেরেননি।
আগের তালিকায় থাকা ১৪টি এজেন্সির মধ্যে রয়েছে- ঢাকার নয়াপল্টনের আল ফাতেহা ট্রাভেলস, আবাবিল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সোনিয়া ট্রাভেলস ও সৌদি বাংলা হজ সার্ভিস; পুরানা পল্টনের হাইলিংকস ট্রাভেলস; ফার্মগেইটের ইনসাফ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস; খিলগাঁওয়ের এসএইচ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল; মতিঝিলের মিনি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস ও সাদমান এয়ার সার্ভিস এবং ফকিরাপুলের রাজন ওভারসিজ, আল-আমিন এভিয়েশন ও হান্না ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস।
চট্টগ্রামের এজেন্সিগুলোর মধ্যে রয়েছে আন্দরকিল্লার আমানত ট্রাভেলস এবং পূর্ব নাসিরাবাদের যোগাযোগ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস।
হাব মহাসচিব জানান, জুলাই মাসের শুরুতেই সৌদি কর্তৃপক্ষ এই ১৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় এসব এজেন্সি কোনো হজযাত্রীর কাছ থেকে টাকা জমা নেয়নি। তবে হজের ১০ মাস পর কোনো এজেন্সির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর হজের সময় অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে সরকার ১০টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ ১০৬টি এজেন্সির বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
Leave a Reply