ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার …
কক্সবাজার শহরের নয়নাভিরাম শতকোটি টাকার জমি দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র কয়েকটি সন্ত্রাসী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের অস্ত্রের ঝনঝনানি ও প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা পুরো এলাকাবাসিকে আতঙ্কিত করে তুললেও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করছেন শান্তিকামী সাধারণ জনগণ।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, পর্যটন এলাকার জেলা পুলিশ লাইন সংলগ্ন অতি মূল্যবান এই ৫ একর ভূমি দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে কয়েক দফা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটে গেছে। সশস্ত্র দখলদাররা সেখানকার ভূমি দখলে নিতে প্রকাশ্যে পাহাড় খুদাই করে গড়ে তুলেছেন মিনি বাসভবন। দখলদাররা খন্ড খন্ড করে পাহাড়ের প্রায় চতুর্দিক দখলে নিয়ে ক্ষান্ত হননি, নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষার মত পাহারাদার বসিয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, এসমস্ত দখল আস্তানাতে রাতে অসামাজিক কার্যকলাপ, দিনে কক্সবাজারের বাঘা-বাঘা সন্ত্রাসীদের আনাগুনা বৃদ্ধি পায়। গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, সশস্ত্র ভূমিগ্রাসীরা জমি দখল প্রতিষ্ঠিত করতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সমাবেশও ঘটাচ্ছে। জানা গেছে, ভাড়ায় আনা এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মধ্যে আরএসও গ্রুপের বেশকিছু সক্রিয় সদস্য রয়েছে। যারা জমি দখল-বেদখলের খাতিরে প্রয়োজনে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিতে রাজি। সংশ্লিষ্ট এলাকার কয়েক ব্যক্তি জানান, সন্ত্রাসীদের মধ্যে কয়েকজন জল্লাদ আদলের খুনী রয়েছে। যারা মানুষ খুন করতে চুল পরিমাণ সময় ক্ষেপন করবেনা।
সম্প্রতি ওই এলাকা ঝিলংজা মৌজার বিএস খতিয়ান নং- ৪৭৪১ এর ৫ একর জমির মালিক সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি থানায় এসে এজাহার জমা দিয়েছেন, কবির আহমদের পুত্র আব্দুস ছালাম, গুরা মিয়ার পুত্র আবু বক্কর, মোঃ হোছনের পুত্র জসিম, মোজাফ্ফরের পুত্র দেলোয়ার, আজাদ, সাইফুল, জুনাইয়েদসহ অজ্ঞাতনামা কিছু সন্ত্রাসী জমি দখলে ত্রাস চালায়। এসময় তারা ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্রের ঝনঝনানি সৃষ্টি করে সেখানে বসবাসরতদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। শুধু তাই নয়, ভূমিগ্রাসীরা গৃহবধূদের শারীরিক নির্যাতন করে ক্ষান্ত হননি, তাদের পরনের স্বর্ণালংকার পর্যন্ত কেড়ে নেয়।
কক্সবাজার থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, কলাতলির ভূমিগ্রাস সংক্রান্ত বিষয়টি তিনি জানেন। এ ব্যাপারে জড়িতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা হয়েছে।
এলাকাবাসি জানান, কক্সবাজারের এই অঞ্চলটাকে ভূমিগ্রাসীদের অভয়ারণ্য বললেই চলে। স্থানীয়ভাবে জায়গা জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শক্তিশালী মাস্তানদের দৃষ্টি সবসময় এখানে। ফলে ইতোপূর্বেও ভূমিগ্রাসীরা এই এলাকার শত শত একর জমি বাহুবলে গ্রাস করে নিয়েছে। তদন্ত করলে প্রমাণ মিলবে, এখানে বসবাসরতদের অনেকের বৈধ কাগজপত্র নেই। শুধু লাঠি-সোটা, কিরিচ দা কিংবা ভয়ংকর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসতে পারলেই এক খন্ড জায়গার মালিক বনা কোন ব্যাপার না। সূত্র মতে, পর্যটন শহর কক্সবাজারের প্রাকৃতিক কারণে রাতারাতি মূল্যবান হওয়া এই অঞ্চলে কিছুদিন আগেও বন বিভাগের বড় বড় পাহাড় ছিল। ছিল খাস জায়গা। এখন ভূমিগ্রাসীরা তা কেটে টিলা ও খিলা শ্রেণির দেখিয়ে বসবাস করছে।