প্রথমবারের মতো ভাঙন এবং জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। একই সঙ্গে বৃষ্টিপাত এবং জোয়ারের পানিতে জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ একে এম নাজমুল হক জানিয়েছেন, উড়িষ্যা উপকূলের অদুরে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘু চাপের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে দেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তবে কক্সবাজারের ওপর দিয়ে এখন থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সোমবার রাত থেকে কক্সবাজারে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত এবং জোয়ারে প্রথমবারের মতো দেশের এবং জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা ঘটেছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বাংলানিউজকে জানান, সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার সকালে ভাঙনে ২১টি বসতবাড়ী সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাজারেও জলোচ্ছ্বাসে ১০টি দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের চতুর্দিকে ভাঙন ধরলেও সবচেয়ে বেশি ভাঙন ধরেছে উত্তর ও পশ্চিম অংশে।
কবরস্থানের বেশিভাগই ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক কবরে মৃতদেহ উম্মুক্ত হয়ে পড়েছে। পুলিশ ফাঁড়ির বাউন্ডারি বিধ্বস্ত হয়েছে। তাছাড়া ছয়জন মাঝি-মাল্লাসহ একটি ফিশিং ট্রলার সাগরে ডুবে গেছে। মাঝিমাল্লারা সাতঁরে তীরে ফিরলেও ফিশিং ট্রলারটি এখনো পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি জানান, জোয়ারের পানি ছয় থেকে আট ফুট বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সাগরের ঢেউ জনবসতিতে ঢুকে পড়ছে। এতে দ্বীপের চতুর্দিকে ভাঙন ধরেছে।
সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, গত তিনদিন ধরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
তিনি জানান, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের ওপর দিয়ে পূর্ণিমার জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে সাবরাং ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া, মাঝরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, ডাঙ্গারপাড়া, উত্তরপাড়া, মাঝর ডেইল, ক্যাম্পপাড়া, জালিয়াপাড়া, মগপুরা, বিলপাড়া, হারিয়াখালী, কচুবনিয়া, কাটাবনিয়া, ঘোলাপাড়া, লাফার ঘোনা এলাকার ঘরবাড়িসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, চিংড়ি ঘের, পানের বরজ, সুপারির বাগান ডুবে গেছে।
একই সঙ্গে ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে পৌরসভার সাইডংকিল, ইসলামাবাদ, পল্লানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং নাফনদী ও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন বেড়িবাঁধে নতুন ভাবে ভাঙন দেখা গেছে।
ক্যাম্প পাড়ার বাসিন্দা নজির আহমদ জানান, লবণাক্ত জোয়ারের পানিতে ফসলি জমি, দালান-কোঠা, ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে এলাকাবাসীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক, সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনার ডেইল এলাকায় পানিবন্দি রয়েছে অনেক মানুষ। এছাড়া মহেশখালী এবং কুতুবদিয়া উপজেলার প্রায় ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।