ওবায়দুল্লাহ রনিএক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি চলছে। অনেক ব্যাংক আশানুরূপ আমানত না থাকায় নিয়মিত গ্রাহককে ঋণ দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন রোজার ঈদে বড় ধরনের তারল্য সংকটের আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনই উদ্যোগ নিয়েছে। সংকট মোকাবেলায় ১৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি তহবিল সংরক্ষণের প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দাশগুপ্ত অসীম কুমার সমকালকে বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় ঈদের আগে গ্রাহকরা বেশি টাকা উঠিয়ে থাকেন। তাতে ব্যাংকগুলোতে সংকট দেখা দিতে পারে। যে কারণে তাদের সরবরাহের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৭ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা সংরক্ষণ করছে। এরই মধ্যে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ভল্টে জমা হয়েছে। বাকি টাকাও শিগগির এসে যাবে। ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) অতিরিক্ত অংশ বা স্পেশাল রেপোর মাধ্যমে এসব অর্থ দেওয়া হবে। গত রোজার ঈদে ব্যাংকগুলোকে ১৩ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করা হয়েছিল বলে তিনি জানান। সূত্র জানায়, তারল্য সংকটের কারণে বর্তমানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি) বেশ উচ্চ সুদে লেনদেন হচ্ছে। ৩০ জুন কলমানিতে গড় সুদহার ছিল ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের বছরের একই দিনে যা
ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কলমানিতে গড় সুদহার ৬২ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় কলমানিতে লেনদেনের পরিমাণও বেশ বেড়েছে। মূলত কোনো ব্যাংকে যখন নগদ টাকার সংকট থাকে তখন কলমানির মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকে এক রাতের জন্য ধার নিয়ে গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। অনেক সময় তারা স্বল্প সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো বা স্পেশাল রেপোর সুবিধা নেয়। একটি সময় ব্যাংকগুলো শুধু ঈদের আগে কলমানি বা রেপোতে লেনদেন করত। তবে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সে চিত্র বদলেছে। সারাবছরই এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংক ধার করে চলেছে।
বেসরকারি একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, প্রতি বছরই ঈদের আগে গ্রাহকদের টাকার চাহিদা বাড়ে। সে চাহিদা জোগান দিতে গিয়ে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট থেকে এক রাতের জন্য উচ্চ সুদে ধার নেয়। তবে এবার সারাবছরই ব্যাংকগুলোতে যেভাবে সংকট চলছে, তাতে ঈদের সময় কলমানি মার্কেট থেকে অনেক বেশি সুদে টাকা নিতে হতে পারে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার তহবিল করলেও তাতে চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।
সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৭ হাজার ৬৯২ কোটি টাকার যে তহবিল করবে এরই মধ্যে তার ১৪ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা মুদ্রণ সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে রয়েছে ৩ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। বাকি ৩ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ছাপার কাজ চলছে। শিগগির এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর রক্ষিত নগদ জমার (সিআরআর) অতিরিক্ত অংশ ব্যাংকগুলো ঈদের আগে উঠিয়ে নেয়। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য স্পেশাল রেপোর মাধ্যমে ধার হিসেবে যে অর্থ নিয়ে থাকে এ তহবিল থেকে তা সরবরাহ করা হবে।
Leave a Reply