রমজান উদ্দিন পটল, টেকনাফ …
সীমান্ত এলাকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এসময়ের ক্ষতিকর মাদক ইয়াবা। দিনদিন বাড়ছে এমাদকের সেবন। ক্রমেই পাচার ও সেবন বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকায় চলছে রমরমা ইয়াবা বাণিজ্য। ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যা দিনদিন বাড়তে থাকায় বেচা-বিক্রির ধুমপড়ে। বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনের পাশাপাশি ইয়াবা নীল দংশনের শিকার অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন। বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গণে সন্ধ্যার পর জমে উঠে সেবনকারীদের আসর। পাচারে শিশু শিক্ষার্থীদের ব্যবহার ও সেবনে আসক্ত করার মূলে রয়েছে আন্ডার গ্রাউন্ডের গডফাদার ও ইয়াবা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের অশুভ কলাকৌশল এবং আগামী প্রজন্মের মেধা ধ্বংসের সুদূর প্রসারী কল্পনা বলে অনেকে মনে করেন। টেকনাফ উপজেলার অন্যতম ইয়াবার সাম্রাজ্য নামে খ্যাত হ্নীলা এলাকায় গত বেশ কিছুদিন ধরে অনুসন্ধান করে ইয়াবার অবাদ বিস্তার ও বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনের পাশাপাশি শিশু কিশোর শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হারে আসক্ত হয়ে পড়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। হ্নীলার সিকদার পাড়া, পূর্ব সিকদার পাড়া, জালিয়া পাড়া, লেদা, মুহছনী ইয়াবার ঘাটি হিসেবে পরিচিত। এসব এলাকার সীমান্ত পথে মায়ানমার হতে ইয়াবার বড় আকারের চালান আসে। এলাকায় ২৫জনের মত গডফাদার নিয়ন্ত্রণ করে পৃথক সিন্ডিকেট। এদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠে তিনস্তরের বহু গোপন সিন্ডিকেট। রয়েছে দুই শতাধিক পাচারকারী ও শতাধিক খুচরা বিক্রেতা। রাস্তাঘাটে চলার পথে কিংবা ফুটপাটের পানের দোকান ও ঝুঁপড়ি বিপণী, ষ্টোরগুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হয় ইয়াবা বড়ি। ডণ’ লেখা চম্পা নামক তিন আইটেমের ট্যাবলেট, জ লেখা দুই আইটেমের ট্যাবলেট বেচাবিক্রি চলে পৃথক দামে। এসব ইয়াবা হাতের নাগালে থাকায় সেবনে উৎসাহ বাড়ছে বলে অনেকে মত প্রকাশ করেন। ঝুঁপড়ি বিপণী বিতান, ফুটপাটের ফেরী বিক্রেতা অধিকাংশ বখাটে টাইপের হলেও পাচারে জড়িতরা অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ইয়াবা পাচার ও সেবন শিক্ষার্থী ও শিক্ষাঙ্গণ গ্রাস করায় অসংখ্য শিক্ষার্থীরা বিপদগামী হয়ে পড়ছে। এঅবস্থায় এলাকার সেবন বেড়েছে ব্যাপক হারে। সেবনের আসর জমে উঠে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের খোলা মাঠ, পরিত্যক্ত ভবন ও কক্ষে চলে ইয়াবা সেবনের আসর। পানখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলুচামারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌধুরী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাদিমুরা আনন্দ স্কুল, হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়-জাদি পাহাড়, গার্লস্ স্কুল, প্রি-ক্যাডেট স্কুলসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সন্ধ্যার পর হতেই আসর জমতে দেখা যায়। মোম জ্বালিয়ে আগুনে ইয়াবা পুড়িয়ে সেবনের দৃশ্যটি এলাকার মুরব্বী ও সচেতন মহলের নজরে পড়লেও এসব ব্যাপারে আপত্তি তুললে উল্টো হুমকি ও হাকাবকার শিকার হতে হয়। ইয়াবা পাচারকারী ও সেবনকারীরা এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠে অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত করারও ব্যাপক তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি ঘটছে। সম্প্রতি সময়ে একশিশুসহ ৩ব্যক্তি খুন ও ব্যাপক সংঘাতের ঘটনা ইয়াবার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা যায়। অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গণে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে সিন্ডিকেট চক্র। শিক্ষাঙ্গণে ইয়াবা আগ্রাসনে দিনদিন সেবনে ঝুঁকে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। তথ্যমতে, হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ২০জন আল-ফালাহ্ একাডেমীর ১৫Ñ২০জন, পানখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮Ñ১০জন এবং বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ পড়–য়া ৪শতাধিক শিক্ষার্থী এবং বেকার যুবকসহ সহস্রাধিক ব্যক্তি ইয়াবা সেবনে জড়িয়ে পড়ে। হ্নীলা আল-ফালাহ্ একাডেমীর ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্র দীর্ঘ ২বছর ধরে ইয়াবা সেবন করে আসছে। কৌশলে তার সাথে আলাপকালে জানা যায় নানা কাহিনী। কক্সবাজার শহরে বসবাস করে তার পরিবার। পিতা দীর্ঘ ১০বছর ধরে সৌদি আরবে কর্মরত। পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়াতে স্কুলের সুনাম শুনে হ্নীলা আল-ফালাহ্ একাডেমীতে ভর্তি করে। হোস্টেলে অবস্থান করে লেখা পড়া করে সে। বখাটে বন্ধুদের আড্ডায় বসে প্রথম ইয়াবা সেবন করে। তারপর চলে অনেক কিছু। প্রথম ধাপে একটি করে ইয়াবা সেবনকারী সে ছাত্র এখন রীতিমত ইয়াবা সেবন করে। বর্তমানে প্রতিদিন ১শত ২০টাকা দামে চম্পা বা সাড়ে ৩শত টাকা দামে আর সেভেন ট্যাবলেট সেবন করতে হয়। পড়ালেখা বাবদ হোস্টেল খরচ ৬-৭ হাজার টাকা কয়েকদিন ইয়াবা সেবন করাতে শেষ হয়ে পড়ে। বাকী নানা খরচ ও ট্যাবলেট সেবনের অর্থ জোগান দিতে হয় অপরাধ কর্ম থেকে। এসব গোপন অপরাধের বর্ণনা জানতে চাইলে সে হেসে নানা ভঙ্গিমায় এড়িয়ে চলে। বর্তমানে সে পুরোপুরি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় লেখাপড়া থেকে অনেকটা বিরত রয়েছে। এভাবে অকালে ঝড়ে যাচ্ছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। আল-ফালাহ্ একাডেমী, পানখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থী এলাকার চিহ্নিত পাচারকারী সদস্য ও স্থানীয় সচেতন মহলের সাথে একান্ত আলাপ করে এতথ্য বেরিয়ে আসে। *****
প্রেরক ঃ রমজান উদ্দিন পটল, টেকনাফ, কক্সবাজার।
তারিখ ঃ ১২/১২/২০১২ইং।